Trending
বিশ্বব্যাপী ওষুধের বাজারে চিনের পরেই ছড়ি ঘোরাচ্ছে ভারত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এবং চিন ছাড়া ভারতই গোটা বিশ্বে একমাত্র দেশ যে ওষুধ শিল্পের মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতিকে মজবুত করছে দিনের পর দিন। আজ যদি ফার্মা প্রোডাকশন ভ্যালুর দিকে তাকাই, তাহলে বলতে হবে ভারত রয়েছে বিশ্বের দশম স্থানে। আর যদি উৎপাদনের অঙ্কটা দেখি, তাহলে বলব, ভারত রয়েছে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে। একটি তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, আমেরিকার মতনই শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করছে ভারত। বাড়ছে চিকিতসাগত দক্ষতা। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী আজ ভারত ক্লিনিকাল ট্রায়ালে পৌঁছতে চলেছে এক নম্বরে। এমনও বলা হচ্ছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় ওষুধের বাজার পৌঁছে যেতে পারে ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, ওষুধ শিল্পে আমাদের ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে এটা কি জানেন যে, ভারত ছাড়াও আরেকটি দেশ চুপিসারে নিজের ওষুধ শিল্পকে অন্তত ভারতের কাছাকাছি নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে? গ্লোবাল মার্কেটে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাইছে? দেশটা অন্য কেউ নয়। আমাদেরই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। হ্যাঁ, একটু অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে, বাংলাদেশ আজ ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে। শুধু আভ্যন্তরীণ বাজার বলেই নয়। বাংলাদেশের ওষুধ আজ পাড়ি দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সেখান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা কোষাগারে ঢোকাচ্ছে বাংলাদেশ। তারপরেই বাংলাদেশের অনেকে মনে করছেন যে ওষুধ শিল্পে নাকি ভারতকে টেক্কা দিতে পারে বাংলাদেশ। সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি ওষুধ শিল্পে ভারতের জায়গা নড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখছে বাংলাদেশ?
বলা হচ্ছে, বিশ্বে এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে ওষুধ তৈরি করার মতন সুযোগ-সুবিধে একেবারে নেই। তাই উন্নত মানের কিন্তু স্বল্প মূল্যের জেনেরিক ওষুধের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর সেকারণেই বিশ্বব্যাপী কদর বাড়ছে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধের। বর্তমানে, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এতো দ্রুত এগোচ্ছে যে, চিন, ভারত, পশ্চিমী দেশগুলো ছাড়া আজ ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে অদ্বিতীয়। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশে তৈরি ওষুধগুলোর গুণগত মান কোন অংশে কম নয় চিন, ভারত বা ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের থেকে। অতএব, বিশ্ব বাজারে ওষুধ তৈরিতে বাংলাদেশের সুনাম ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে। আর যে কারণে বহু বাজার বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, বাংলাদেশের সামনে আসতে চলেছে বিরাট সুযোগ। পঞ্চাশের দশক থেকেই বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে মনযোগী হতে শুরু করে। এবং একাত্তরের যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, ওষুধ তৈরিতে আসরে নামতে শুরু করে পূর্ববঙ্গ। এটাই স্বাভাবিক যে শুরুর দিনগুলোয় বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এখনকার মতন রকেটের গতিতে উঠতে পারেনি। বরং কিছুটা গোঁত্তাই খেয়েছিল। সেই সময় দেশে ওষুধের চাহিদার মাত্র ২০% তৈরি করতে সক্ষম ছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে ৮০% ওষুধ তাদের আমদানি করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। খেয়াল রাখবেন, সেই সময় কিন্তু ওষুধের জন্য বাংলাদেশের নির্ভরতা খুব বেশিমাত্রায় ছিল পাকিস্তানের ওপরেই। কিন্তু কিভাবে যেন, সব ওলটপালট হয়ে গেল তাই না? আজ বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে যে দক্ষতা অর্জন করেছে, সেখানে পাকিস্তান কোথায়?
বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করছে বাংলাদেশ। জানা গিয়েছে আজ গোটা বাংলাদেশে সরকারি বদান্যতায় ছোট, বড় মিলিয়ে ওষুধের কারখানার সংখ্যা ৮৫০ মতন। আর দেশে তৈরি হচ্ছে প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৮ শতাংশ! বাংলাদেশের ওষুধের একটা বড় মার্কেট রয়েছে ভিয়েতনামে। এছাড়াও রয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে বাংলাদেশের ওষুধ পৌঁছে যায়। তবে এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের ওষুধের গুণগত মান দেখে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ বাংলাদেশের ওষুধকে বাজার ধরতে অনেকটাই সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্সেও বাংলাদেশের ওষুধ ভালোভাবে রফতানি হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিকালস মনে করছে, চিন বা ভারতীয় ওষুধের চাহিদা যত দিন যাচ্ছে বেড়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ওষুধ রফতানি করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে বাংলাদেশ। মনে করা হচ্ছে, চিন বা ভারতের পক্ষে যখন ওষুধের জোগান দেওয়া সাধ্যের বাইরে চলে যাবে, তখনই প্রয়োজন পড়বে বিকল্পের। বাংলাদেশ হতে চলেছে সেই বিকল্প।
বর্তমানে বাংলাদেশের ৯টি সংস্থা ইতিমধ্যেই আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করে কোষাগারে ঢুকিয়েছিল ৬৪৬ কোটি ৯৮ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা। আর যদি ছয় বছরের ব্যবধান ধরতে হয়, তাহলে দেখা যাবে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প থেকে রফতানির অঙ্ক বেড়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকায়। জানা গিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প যে গতিতে এগোচ্ছে, তারপর আলাদা ভাবে ২ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে। আর ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ওষুধ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। তবে একটি তথ্য বলছে, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের সঙ্গে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ জড়িয়ে রয়েছেন। আর যেভাবে এই ওষুধ শিল্প ধীরে ধীরে বাংলাদেশে প্রসার লাভ করেছে এবং করছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে পোশাক শিল্পের পর ওষুধ শিল্পই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য হয়ে উঠবে।
সুতরাং, এটা ঠিকই যে আজ বাংলাদেশ যে গতিতে নিজের মেডিকেল সেক্টরকে ক্রমশ স্ট্রং করেই চলেছে, তারপর ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ যে বেনজির ছাপ রাখবে, সেটা সহজেই বলা যায়।
বিজনেস প্রাইম নিউজে।
জীবন হোক অর্থবহ