Story
ভাসমান সবজি চাষ আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ব কৃষিবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যুগান্তকারী পদক্ষেপে ইতিমধ্যেই বিশ্বের দরবারে বিশেষত কৃষি বিজ্ঞানের আঙিনায় নজর কেড়েছে বাংলাদেশ। এমনকি রাষ্ট্রসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন তাদের রিপোর্টে এই ভাসমান সবজি চাষকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়ায় এই চাষ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে পৃথিবীর নানান প্রান্তে।
বাংলাদেশ ছাড়াও কম্বোডিয়া, মায়ানমার এবং ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে যেমন ওড়িশা, অসম ও গুজরাতেও এখন এই ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের উপকূলবর্তী রাজ্য ওড়িশার পুরীতে ভাসমান সবজি চাষ ইতিমধ্যেই অনেকটা পরিচিতি লাভ করেছে। অসমের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বেশ কয়েক হাজার হেক্টর জুড়ে এখন ভাসমান সবজি চাষ মাঝেমাঝেই উঁকি দিচ্ছে। তবে ওপার বাংলায় ভাসমান সবজি চাষে যেভাবে বিপ্লব এসেছে, এপার বাংলায় সেই ভাসমান সবজি চাষ এখনো বেশ অপরিচিত হয়েই রয়ে গিয়েছে।
ঢাকা থেকে মাত্র ৩০০ কিমি দূরে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সাপুয়া, ভাটিয়ালপুরে ভাসমান সবজি চাষকে রীতিমত মডেলের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কচুরিপানা, বাঁশ দিয়ে তৈরি ভাসমান বেড সরকারি উদ্যোগে লালিত পালিত হয়ে ভূমিহীনদের সামনে খুলে দিয়েছে চাষাবাদের নতুন দিগন্ত।
এখানকার হোসেন আলি, মুজিবর, সাত্তার ও ইলিয়াসরা যেন বাংলাদেশের এই কৃষি বিপ্লবের একেকজন লেফট্যানেন্ট। অতীতে ফরিদগঞ্জ উপজেলার এই অঞ্চলগুলিতে সেরকমভাবে চাষাবাদ না হলেও যেটুকুই হয়ত সনাতনী প্রথাতেই হত। কিন্তু এলাকায় ছিল অসংখ্য জলাশয়। বিষয়টি নজরে আসতেই ডাকাতিয়া নদী ও এলাকার বিভিন্ন জলাশয়কে কাজে লাগাতে উদ্যোগী হয় বাংলাদেশ কৃষি দফতর। কৃষকদের দফতরের পক্ষ থেকে ভাসমান বেড তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষনের পর যখন হাতেকলমে কাজ শুরু করলেন এখানকার কৃষকরা তখন ছবিটা ক্রমশই বদলাতে থাকল। গুগল সার্চেও উঠে আসল ফ্লোটিং বেড ভেজিটেবল কালটিভেশন, ডেসটিনেশন মানেই বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ মানেই ফরিদগঞ্জ উপজেলা। রাতারাতি বদলে গেল এখানকার কৃষি নির্ভর অর্থনৈতিক চালচিত্রটা।
নিজের ভাসমান বেডে দাঁড়িয়ে নিজের চাষের ফসল কতটা লাভজনক হয়ে উঠতে পারে সেকথাই উঠে আসল বিজনেস প্রাইম নিউজের ক্যামের্যা একেবারে গ্রাউন্ড জিরো থেকে।
লাউ, কুমড়ো, শসা, শাকসবজির পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার বিশেষত বাংলাদেশের কৃষি দফতর এই ভাসমান বেডগুলিতেও মশলা চাষেও উদ্যোগী হয়েছেন। এখানে চাষিদের ভাসমান বেড তৈরির জন্য কোন টাকাই খরচ করতে হয়না। পুরোটাই বহন করে সরকারি কৃষি দফতর। তাই লাভের অঙ্ক প্রসঙ্গে বেশ তৃপ্তির হাসি দেখা গেল এখানকার কৃষকের মুখে।
তবে ভাসমান বেডের স্পেশ্যালিটিটা রয়েছে অন্য জায়গায়। একেবারে রাসায়নিক ছাড়া সম্পূর্ণ জৈব সার দিয়ে ভাসমান বেডে সবজি এবং মশলা চাষ করা হয় বলে এখানকার উৎপাদিত ফসল যেমন নিরাপদ। তেমনি পুষ্টিগুনেও ভরপুর।
তাই যাদের জমি নেই তাদের কাছে চাষাবাদ ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মত। কিন্তু জমি না থাকলেও এলাকার পুকুর কিংবা খালবিলে সবজি চাষ যে সম্ভব তা দেখিয়ে দিল এখানকার কৃষি দফতর। অথচ এপার বাংলায় সেই একইরকম খালবিল থাকলেও সেগুলি পড়ে রয়েছে এখনো অনাদরে। অব্যবহৃত অবস্থায়। কাঁটাতারের ওপারের বাংলায় এটা সম্ভব হলেও এই বাংলায় তা এখনো শুরুই হয়নি। অথচ এই বাংলাতেও বহু মানুষ এখনো গ্রামে বসবাস করেন যাদের নিজস্ব কোন চাষের জমি নেই। তাঁদের ক্ষেত্রে তো এটা যুগান্তকারী হতেই পারে।
তবে গোটা দুনিয়ার সামনে ভাসমান সবজি চাষে বাংলাদেশ যে ক্রমশ মডেল হয়ে উঠছে তা জানান দিচ্ছে স্বয়ং রাষ্ট্রসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের রিপোর্ট। আর ক্যামেরায় তুলে ধরা হল সেই নতুন সবজি বিপ্লবেরই বার্তাকে।
ঋদি হক
ঢাকা