Trending
এবার ডলারকে কাঁচকলা দেখাল বাংলাদেশ। পরিবর্তে চিনা মুদ্রা ইউয়ান যেন বড় আপন হয়ে পড়ল। তার জেরে আমেরিকার গোসা হবে কিনা সেটা বলবে ভবিষ্যৎ। কিন্তু ডলারের দাদাগিরি কমানোর ব্যপারে রাশিয়া এবং চিন যেরকম এক সারিতে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এবার বাংলাদেশ নিজের জায়গা পাকা করে নিল। যা কার্যত বুঝিয়ে দিল, দেশের রিজার্ভে এখন আর শুধু ডলার থাকবে না। বরং অন্য মুদ্রা নিয়ে এসে ডি-ডলারাইজেশনের প্রভাবকেই আরও ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা পৌঁছে গেল অনেকটাই।
কথা হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে। প্রোজেক্ট কমপ্লিট করার জন্য রাশিয়ার থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল হাসিনা সরকার। সেই ঋণের কিছুটাই এখন শোধ করবে বাংলাদেশ। অঙ্কটা ৩১৮ মিলিয়ন ডলার মতন। বাংলাদেশ পুরোটাই শোধ করতে চলেছে চিনা মুদ্রা ইউয়ানে। এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। প্রাথমিক পর্যায়ে রাশিয়া ইউয়ানে ঋণ পরিশোধের বিষয়টায় তেমন একটা রাজি ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে মস্কোর পরপর কিছু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। তারপর অবশ্য রাজি হয় রাশিয়া নিজেও। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চালাতে গেলে ইউয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া বেটার বলেই মনে করে দুটো দেশ। কিন্তু রুবল ছেড়ে ইউয়ানে আগ্রহ বাড়ছে কেন বাংলাদেশের?
তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলার, পাউন্ড বা ইউরোর মত এবার দাপট দেখানোর পালা চিনা মুদ্রা ইউয়ানের। বিশ্বজুড়ে ইউয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালে আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড তাদের এসডিআরে ইউয়ানকে যুক্ত করেছে। ফলে ইউয়ান মজুদ রাখার আগ্রহ বাড়ছে। এসডিআর হচ্ছে স্পেশ্যাল ড্রয়িং রাইটস। এর আওতায় রয়েছে মার্কিনী ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েনের মতন মুদ্রা। সেই তালিকায় ইউয়ান এসে পড়া মানে এখন একে বৈশ্বিক মুদ্রাও বলা যেতে পারে। আর যে কারণে এই পথে হাঁটল বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। সিদ্ধান্ত নেয়, শুধু ডলারের আধিপত্য বজায় রাখলেই হবে না। তাই নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইউয়ান রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাসিনা সরকার। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের একটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, তাদের ফরেন রিজার্ভে মার্কিনী ডলারের পরিমাণ ৮১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ৭৫ শতাংশ। এদিকে ইউয়ানের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৭ সালে যেখানে ইউয়ান রিজার্ভ ছিল ১ শতাংশ, সেটাই ২০২২ সালে অগাস্ট মাসে দাঁড়িয়েছে ১.৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ চিনের সঙ্গে নিজের ব্যবসাকে আরও বাড়ানোর জন্য ইউয়ানের ওপরেই জোর দিচ্ছে। তাই চিনা মুদ্রাকে রিজার্ভে রাখার জন্য নেওয়া হচ্ছে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা। তাহলে পেমেন্ট মেথডটা কী? খুব সিম্পল। রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর আমেরিকা এবং পশ্চিমি দেশগুলো রাশিয়াকে নিধিরাম সর্দার বানানোর তালে ছিল। সবরকম পেমেন্ট সিস্টেম থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। স্বাভাবিকভাবেই সুইফট থেকেও রাশিয়ার যাবতীয় সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ডলারে নয়। বরং ইউয়ান মারফৎ বাংলাদেশ পেমেন্ট করবে রাশিয়াকে। তার জন্য বাংলাদেশ পেমেন্ট করবে চিনা ব্যাঙ্ককে। চিনের সিআইপিএস বা ক্রস-বর্ডার ইন্টারব্যাঙ্ক পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে রাশিয়া পেয়ে যাবে তাদের অর্থ। সুইফটের বিকল্প হল এই সিআইপিএস। যেখানে সবথেকে নির্ভরযোগ্য মুদ্রা হল ইউয়ান।
আর শুধু এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার থেকে যে সকল বাণিজ্য রাশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে হবে, তার পেমেন্ট করার চেষ্টা করা হবে ইউয়ানের মাধ্যমেই। এতে অবশ্য রাশিয়াও এখন নতুন করে আর চিন্তায় নেই। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের একটি তথ্য বলছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে যে পরিমাণ রফতানি হয়েছে তার ৩৪% হয়েছে মার্কিন ডলারে। অন্যদিকে ইউরোয় হয়েছে মাত্র ১৯%। কিন্তু এখন দিন দিন ইউয়ান এবং রুবলের আধিপত্য ক্রমশ বাড়ছে। তাই ডলারের দাদাগিরি ঘোচাতে বাংলাদেশের চিনা মুদ্রায় ঋণ পরিশোধের বিষয়টায় আপত্তি জানায় নি রাশিয়া। আপনাদের কী মনে হয়? ডলারের সামনে ইউয়ান কি সত্যিই দাঁড়াতে পারবে? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে প্রতিবেদনটি লাইক করুন, শেয়ার করুন আর অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ