Trending

বাংলাদেশ নিয়ে দিন দিন চিন্তা এবং চাপ বাড়ছে ভারতের। আর এই চিন্তার আগুনে ঘি ঢালছে কে জানেন? না চিন নয়। বরং আমেরিকা। দেশটা এমনভাবে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করছে যে এবার সেটা ভারতের জন্য যথেষ্ট বিরক্তির জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। ভারত ছাড়া যেমন গতি নেই বাংলাদেশের তেমনই ভারত ছাড়া চিনকে ঠাণ্ডা করতে আর কেউ যে পারবে না সেটা বুঝে গেছে আমেরিকা। কিন্তু মুশকিল কী জানেন? আমেরিকার এই লোকদেখানো দাদাগিরির জন্য এবার বিপদ বাড়ছে ভারতের। সেই বিরক্তি কিছুটা প্রকাশও পেয়েছে আমেরিকার প্রশাসনিক মহলে। কিন্তু আমেরিকা যদি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা গলায়, তাহলে ভারতের কাছে সেটা অস্বস্তির কেন? আজকের আলোচনা সারব এই নিয়েই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে কার্যত শত্রুতা করেছিল আমেরিকা। পাকিস্তানের হাত থেকে যাতে বাংলাদেশ স্বাধীনতা না-অর্জন করতে পারে, তার জন্য পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যাই হোক। ভারত এবং রাশিয়া না-থাকলে কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীন হবার স্বপ্ন অধরা থেকে যেত। এখন ব্যপারটা হচ্ছে, পরিস্থিতি পাল্টেছে ঠিকই। কিন্তু আমেরিকার সর্বগ্রাসী এবং পিছন থেকে ছুরি মারার অভ্যেসটা এখনো যায়নি। বিশ্বের সর্বশক্তিমান রাষ্ট্র আমেরিকা তাই বাংলাদেশ নিয়ে একটু বেশিই চিন্তাশীল হয়ে পড়েছে। আর সেটা আবার বাংলাদেশের ভ্রু কুঁচকে দেবার জন্য যথেষ্ট। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের আরও কাছাকাছি আসতে চাইছে চিন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। একদিকে যখন আমেরিকার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যথেষ্ট বিরক্ত, তেমনই চিনের পাশে দাঁড়িয়ে পড়াটা ভারতের জন্য চিন্তার। আর সেটা হলে ভারতের আধিপত্য যে একটু হলেও টালমাটাল হবে সে কথা আলাদা করে বলে দেবার প্রয়োজন নেই।
মুশকিল হচ্ছে, বাংলাদেশের ভিসা নীতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন প্রশাসন। আর আমরা সকলেই জানি যে, আমেরিকা কোন কিছু নিয়ে প্রশ্ন তুললে আসলে সেটা দাদাগিরি দেখানোর সামিল। খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ভারত। এবং ভারত চিরকালই চেয়ে এসেছে, কোনভাবেই যেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে চিড় না ধরে। কিন্তু আমেরিকা দাদাগিরি দেখাচ্ছে বলে চিনের দিকে বেশি করে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। আর চিনের দিকে বেশি ঝোঁকা মানেই সেটা ভারতের জন্য যথেষ্ট থ্রেট। বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়া রিজিওনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ভৌগলিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে বিশ্বের যে কোন শক্তিধর দেশ চাইবে বাংলাদেশকে পাশে রাখতে। সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই ভারত এবং চিন। তবে ভারতের সঙ্গে কোনদিন সম্পর্ক খারাপের কথা ভাবতেও পারেনা বাংলাদেশ। তার অন্যতম কারণ বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ। এফডিআই ফিনান্সের একটি রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে ভারতের বিভিন্ন দিক থেকে যত পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে, তার মোট অঙ্কের পরিমাণ প্রায় ৩.১১ বিলিয়ন ডলার। সেটা অদূর ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াতে পারে ৯ বিলিয়ন ডলারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সুবিধার জন্য ভারতকে তাদের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ভারত ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠতার জায়গায় পৌঁছবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যে গতি আনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে ভারত যেভাবে বিনিয়োগ করেছে, তাতে আখেরে লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ নিজেও। কিন্তু সমস্যাটা গলার কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে অন্য আরেকটা ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে যদি কেউ বিপুল ইনভেস্ট করে থাকে সেটা ভারত ছাড়া একমাত্র চিন। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বাংলাদেশকে অর্থ সাহায্য করেছে চিন। অঙ্কটা প্রায় ৯৪০ মিলিয়ন ডলার মতন। এবং ভবিষ্যতেও যে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চিন আরও প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করবে, সেটা এখন নতুন করে না-বললেও চলবে। এখানেই একটা তথ্য দিয়ে রাখি। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য চিনের বিনিয়োগ রয়েছে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০২২ সালে চিনের ১৫-টি কোম্পানি একসঙ্গে বাংলাদেশে বিপুল অঙ্কের এফডিআই আনতে সাহায্য করেছে। সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, চিন ছাড়া বাংলাদেশের গতি নেই। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমেরিকা নাক গলানোর কারণে ধীরে ধীরে বিষয়টা বিরক্তির পর্যায় পৌঁছচ্ছে। ভারতের আশঙ্কা, এই সুযোগ কাজে লাগাবে চিন। বাংলাদেশ যদি চিনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে স্ট্র্যাটেজিকালি ভারত চিনের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে। মানে, চিনের আধিপত্য এই রিজিওনে আরও বাড়বে। এমনিতেই ভারতের এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সংসার এতদিন ঠারেঠোরে চিন সামলে এসেছে। এবার তাদের নজর রয়েছে বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশ যদি এভাবেই চিনকে শলা-পরামর্শর জন্য ডেকে নেয় তখন ভারতের কাছে সেটা অস্বস্তির কারণ তো হবেই। বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পক্ষে এই রিজিওনে দাদাগিরি দেখানো সম্ভব নয়। আবার চিনের পক্ষেও দাদাগিরি দেখানোর জন্য বাংলাদেশকে পাশে চাইবেই। ফলে সবদিক থেকেই যেন ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক ছেঁড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইগো এবং ইমেজ বজায় রাখতে গিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপাড়ে থাকা আমেরিকা আর এদিকে মার্কিন বিরোধী শক্তিসঞ্চয় করার জন্য মুখিয়ে থাকা চিন। এদিকে ভারত কোনভাবেই চাইছে না আমেরিকার অযাচিত হস্তক্ষেপের জন্য বাংলাদেশ ভুল করে চিনের দিকে ঘুরে যাক। সেক্ষেত্রে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের দাদাগিরি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। আর সেটা যাতে না-হয়, তাই ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওনে বাংলাদেশের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলবেন অজিত ডোভাল। তবে লাভের লাভ কী কিছু হবে? সেই উত্তর দেবে সময়। তবে আপাতত বাংলাদেশকে নতুন করে আর চিনের দিকে ঘেঁসে দিতে চাইছে না ভারত। আর সেটাও আমেরিকাকে বোঝানোর প্রয়োজন এসে গিয়েছে। আর যাই হোক, এখন চিনের মতো ভারতও যে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে। তাই বাংলাদেশকে পাশে পেতে এখন টাগ অফ ওয়ার শুরু হয়েছে ভারত এবং চিনের মধ্যে। বাংলাদেশ দাঁড়াবে কার পাশে সেটা বলবে সময়।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ