Trending
সিরিয়া, তুরস্কের ভূমিকম্পে প্রমাণিত পৃথিবীর খামখেয়ালিপনার কাছে আমাদের জীবন কত তুচ্ছ। এক নিমেষে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে সব। ভারত এবং বাংলাদেশেও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে ভালোরকম। বিজ্ঞানীরা যা বলছেন, তাতে বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চল এবং ভারতের পার্বত্য অঞ্চল ছাড়াও বেশ কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে ভূমিকম্পের তীব্রতা পৌঁছে যেতে পারে রিখটার স্কেলে ৭, ৮-এর ওপরে। যে কারণে তছনছ হয়ে যেতে পারে ইকোনমিক সিস্টেম। অর্থনীতি থেকে সমাজ- মানুষের জীবন সবকিছুই বড় ঠুনকো ঠেকে যেন। কিন্তু ভূমিকম্প ছাড়াও আরও বড় বিপদের মুখোমুখি দাঁড়াতে চলেছে বাংলাদেশ সহ ভারতের বেশ কিছু অংশ। তবে আজ আমরা শুধু বাংলাদেশের সেই আসন্ন বিপদ নিয়েই কথা বলব। যেখানে তুলে ধরব, বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ কতটা ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে। শুরু করা যাক আজকের প্রতিবেদন।
আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের যা ভৌগলিক অবস্থান, তাতে জলবায়ুর পরিবর্তন বাংলাদেশের গোটা সমাজজীবনের জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ বাংলাদেশে। গোটা বাংলাদেশের মধ্যে দিয়েই মাকড়সার জালের মতন বয়ে গেছে অসংখ্য নদী। তার অজস্র শাখা, প্রশাখা। মূলত এই দেশের ভূমি হচ্ছে সমতল। আর সেটাই বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বাংলাদেশকে। জানা যাচ্ছে, জলবায়ুর বড় রকম পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ভাগ্যে ঝুলছে বড় খাড়া। সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কী রকম? বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, বাড়ছে তাপমাত্রা, সাইক্লোনের সংখ্যা বৃদ্ধি, বর্ষাকালে স্বাভাবিকের থেকে বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত। এই পয়েন্টগুলো ধরেই এবার এক এক করে এগোনো যাক।
প্রথমেই বলি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি বাড়ে তাহলে সবার আগে বিপদে পড়বে বাংলাদেশের বিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চল। এর ফলে সেই সব এলাকায় বন্যার পরিমাণ অনেকটা বাড়বে। ব্যহত হবে উপকূলীয় এলাকার মানুষজনদের জীবনযাত্রা। বাংলাদেশের মধ্যে যে তিনটি নদীকে মুখ্য হিসেবে ধরা হয়, সেগুলি হল- পদ্মা, মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র। একটি সমীক্ষা বলছে, এই তিনটি নদী দিয়েই এখন বেশি পরিমাণ জল প্রবাহিত হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, জলের পরিমাণ বাড়লে সেটা তখন আর সাগরে গিয়ে মিশতে পারবে না। ফলে নদীর ভাঙন, বন্যার আশঙ্কা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।
এবার আসা যাক, তাপমাত্রা বাড়লে বাংলাদেশের কি কি ক্ষতি হতে পারে। প্রথমেই বলি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সবার আগে আমরা বুঝতে পারব যে গরমকালে রেকর্ড পরিমাণ গরম পড়ছে আবার শীতকালে রেকর্ড ঠাণ্ডা। বাংলাদেশের তাপমাত্রা ৩২-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করে। কিন্তু রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে সেটা পৌঁছে গেছিল প্রায় ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। শীতকালেও যেন অন্যান্য বছরের থেকে ঠাণ্ডার অনুভূতি বেশি হচ্ছে। সেই প্রভাব সরাসরি এসে পড়বে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে। জলবায়ুর খামখেয়ালিপনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না ফলন। এদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে একের পর এক হিমবাহ গলতে শুরু করে দিয়েছে। যে কারণে বাড়ছে সমুদ্রতলের উচ্চতা। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোরকম ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাইক্লোন আছড়ে পড়ার সংখ্যাটা অনেকটাই বাড়বে। জাতিসংঘের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, এখনই সাইক্লোনের তীব্রতা স্বাভাবিকের থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে সাইক্লোনের তীব্রতা আরও অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। ফলে ঘন ঘন সাইক্লোন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য খুব বড় একটা থ্রেট হয়ে দাঁড়াতে চলেছে। বন্যার আশঙ্কা, ফসলের ক্ষতি, মানুষের জীবনযাত্রার অনেকটাই ব্যহত হবে।
মাটিতে নুনের প্রভাব বা লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়বে, সেটাও বাংলাদেশের জন্য কম চিন্তার বিষয় নয়। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জল সংকট দেখা দিতে পারে। জল মানে কিন্তু মিষ্টি জল। নোনা জলের পরিমাণ যদি বাড়তে শুরু করে এবং নোনা জল যদি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঢুকে পড়ে তাহলে চাষবাসের ক্ষতি তো হবেই। একইসঙ্গে মিষ্টি জলের উৎসগুলো একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। যে কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলসংকট দেখা দেবার সম্ভাবনা রয়েছে ভালোরকম।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের উপরে ভবিষ্যতে পড়বে, সুতরাং এখন নিশ্চিন্তে বসে থাকা যাক। এটা ভাবলে কিন্তু বোকামি হবে। কারণ, বাংলাদেশের বহু মানুষ এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব লক্ষ্য করছেন। আর শুধু বাংলাদেশ বলেই কেন? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে সবকটি দেশের ওপর। তবে বাংলাদেশে বারবার সাইক্লোন, বান, উপকূলীয় মানুষ সহ গোটা দেশটাকেই যেন প্রতিদিন অল্প অল্প করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে খাদের ধারে। তবে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্র সবথেকে বেশি সংকটের মুখে এসে দাঁড়াবে। দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট। আকস্মিক বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ বা সিলেটের মতন এলাকা। ক্ষতির মুখে পড়ে হাজার হাজার একর জমি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বোরো ধান। এছাড়া আউশ ধান, আলু, পাট, ডাল, আখ এমনকি শীতকালীন উৎপাদিত ফসল। ধান, গম বা অন্যান্য ফসলের স্বাস্থ্য অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়বে। আক্রমণ হবে নানা ধরণের পোকা মাকড়ের। বাড়বে ছত্রাকজনিত, ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের প্রকোপ। সমস্যা দেখা দেবে জীব বৈচিত্র্যে। ব্যপক ভাবে ব্যহত হবে মাছ এবং চিংড়ির প্রজনন ক্ষমতা। কমতে শুরু করবে মাছ এবং চিংড়ির বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা। একটি সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের এই সমস্যা দেখা দিলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত হবে। দেখা দেবে খাদ্য সংকট, জল সংকট। সঙ্গে বাড়বে বেকারত্ব। মানুষের হাতে থাকবে না জল, খাবার এবং কাজ। তখন উপকূলীয় অঞ্চল ছেড়ে তাঁরা আসবেন শহরে। নগরকেন্দ্রিক সভ্যতায় এসেও বিশেষ লাভ হবে না। কারণ জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে গ্রাম বাংলা যদি এতো ব্যপক পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেশের শহরাঞ্চলেও সেই ক্ষতি বড়সড় আকার নেবে।
তাহলে উপায়? বিজ্ঞানীরা হতাশ। তাঁরা বলছেন উপায় একমাত্র সচেতনতা। আমরা প্রতিদিন ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে ঘুমনো পর্যন্ত যা করে থাকি, তার সঙ্গে কোন না কোনভাবে যুক্ত থাকে কার্বন এমিশন। সেই কার্বন এমিশনের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে বিশ্বে। এছাড়া বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি, যানবাহন- উন্নয়নের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কার্বন এমিশন এখন ব্যপকমাত্রায় হচ্ছে। তাই সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। সেটা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান। প্রত্যেকেরই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে হবে এই জলবায়ুর পরিবর্তন। প্রত্যেককে একসঙ্গে লড়তে হবে। দেশে দেশে বাড়াতে হবে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার। যত অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বাড়বে, ততই প্রকৃতি নিজের ক্ষত নিজেই সারিয়ে তুলতে পারবে। আজ বাংলাদেশ মহাসংকটে। কাল ভারত হবে। পরশু আবার অন্য একটা দেশ হবে। বাদ পড়বে না কেউ। প্রতিবেদন শেষ করার আগে তাই একটাই প্রশ্ন, অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার নিয়ে আপনাদের কি মতামত? সাধারণ মানুষদের মধ্যে অপ্রচলিত শক্তি নিয়ে কতটা সচেতনতা গড়ে তোলা উচিৎ?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ