Trending
রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপাচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। আর সেই টাকা তুলে দিচ্ছে সরকারের হাতে। যার প্রভাব সরাসরি পড়তে চলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনে। তার মানে বাংলাদেশের অর্থনীতি কি দিনে দিনে খারাপ থেকে আরও খারাপতর হচ্ছে? তাহলে সরকার চাইলেই কি ইচ্ছেমতন টাকা ছাপাতে পারবে না? নেগেটিভ প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভাগ্যে? আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা সারব এই নিয়ে।
আগে বলি, বাংলাদেশ সরকার কত টাকা ছাপাচ্ছে। তারপর বলব এই অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর নেপথ্যে কোন দুর্যোগ রয়েছে। চলতি অর্থবর্ষ শুরু হতেই রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। অঙ্কটা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ট্রেজারি বিল এবং ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এই রেকর্ড পরিমাণ টাকা তুলে দিয়েছে সরকারের হাতে। অবশ্যই এমনি এমনি দেয় নি। বরং সরকারকে ধার হিসেবে দিয়েছে। কিন্তু কেন? গত অর্থবর্ষেই তো সরকারের ধার ছিল ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আবার নতুন অর্থবর্ষ শুরু হতেই ১০ হাজার কোটি নতুন ধার! এখন বিষয়টা হচ্ছে কেন এবং ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ছাপানোর কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে নাতো? তার জন্য রেমেডি কিছু আছে?
অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর সোজা মানে মূল্যস্ফীতি। যা সাধারণের জীবনে ভালো রকম প্রভাব ফেলতে পারে। একটি দেশ এক বছরে যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করে, সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ঠিক সেই পরিমাণ টাকা ছাপায়। এখন অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর অর্থ বাংলাদেশের টাকার ভ্যালু কমেছে। বাংলাদেশে সোনার বাজারে এখন আগুন। ২০০৭ সালে যেখানে বাংলাদেশে ১ ভরি সোনার দাম ছিল ১৯ হাজার টাকা মতন, আজ সেখানে বাংলাদেশে ১ ভরি সোনার দাম ছাড়িয়ে গিয়েছে ১ লক্ষ টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কোনভাবেই আটকানো সম্ভব নয়। কারণ, সরকার যতবার অতিরিক্ত টাকা ছাপাচ্ছে ঠিক ততবারই সেই প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনে। আর সোনার মূল্যবৃদ্ধির কারণ এটাই। তাহলে আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এই বিষয়টা কী বাংলাদেশের সরকার বা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানে না? তাহলে কেন অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর দিকে নজর দিয়েছে তারা?
প্রথমেই বলি, অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর দুটো কারণ রয়েছে। একঃ তারল্য সংকট বা লিকুইডিটি ক্রাইসিস। আর বাজেট ঘাটতি। এবার বলি লিকুইডিটি ক্রাইসিস কী এবং কখন হয়? ধরুন, একজন ব্যাঙ্কে গিয়ে দু’লক্ষ টাকা রাখল। এবার ব্যবসা করার জন্য একজন ১ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিলেন। তারপর আরেকজন দ্বিতীয় ব্যক্তি এসেও ফের এক লক্ষ টাকা ধার নিলেন। এবার তৃতীয় ব্যক্তি যদি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিতে আসেন, তখন ব্যাঙ্ক টাকা দেবে কী করে? সেই সময় দেখা যায় লিকুইডিটি ক্রাইসিস। ব্যাঙ্ক তখন লোন দেবার জন্য সেই অতিরিক্ত টাকা ছাপায়।
এবার আসা যাক বাজেট ঘাটতির কথায়। বাজেটে যদি ঘাটতি হয় সরকার তখন ঋণ নেয় ব্যাঙ্ক থেকে। সরকার ঋণ নিয়ে নিলে তখন আর জনগণকে দেবার মতো টাকা থাকে না ব্যাঙ্কগুলোর কাছে। তখন বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা ছাপাতে হয় ব্যাঙ্কগুলোকে। সুতরাং মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। তাহলে এবার প্রশ্ন আসতে পারে, এর কোন সমাধান কি নেই? নিশ্চয়ই আছে। সমাধানের পথ দেখিয়েছেন জন মেনার্ড কেনিস। তাঁর দেখানো পথকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় কেনিসিয়ান ইকোনমিক্স। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে এই সমস্যার সমাধান কিভাবে হতে পারে? যারা কেনিসের মতাদর্শে বিশ্বাসী, তাঁরা বলছেন, যখন সরকার ব্যাঙ্ক থেকে অনেক টাকা ঋণ নেয় তখন সরকারের উচিৎ সেটা বুঝে নেওয়া যে কোন খাতে কত টাকা খরচ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, সেটা বাংলাদেশ সরকারকে খুব বুদ্ধি করে বুঝে তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। তার মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট হতে পারে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট। হাইওয়ে, মেট্রো, বড় বড় বাড়ি, বিল্ডিং সহ সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নে যদি খরচ করা হয় এবং অবশ্যই স্বচ্ছতার সঙ্গে, তাহলে সেই টাকার সদ্ব্যবহার হতে পারে। একমাত্র তখনই সরকার ঐ সমপরিমাণ টাকার সম্পদ উৎপাদন করতে পারবে সরকার। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, সদ্ব্যবহার এবং করাপশন ফ্রি ওয়েতে কি আদৌ খরচ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা? নাকি বাংলাদেশের অর্থনীতি পড়বে ভালোরকম বিপদে? আর সেই ফল ভুগতে হবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ