Daily
কেন্দ্র যা পারেনি তা করে দেখালো এবার পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্র কানে তোলে নি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। পশ্চিমবঙ্গ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই পেশ করলো এবারের রাজ্য বাজেট।
ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে মানুষের হাতে নগদের জোগান বাড়িয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল করাটাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাখির চোখ। সেই চেষ্টাই ধরা পড়ল এবারের রাজ্য বাজেটে।
যদিও বিরোধীরা এবারের পূর্ণাঙ্গ বাজেটকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মমতা সরকারের পেশ করা ভোট অন অ্যাকাউন্টের সাথে বিস্তর ফারাক বলে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সব রাজ্যেই যখন রাজকোষে বিপুল ঘাটতি ঠিক তখন পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে মানুষের হাতে নগদের জোগান তুলে দিয়ে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কৃষক বন্ধু থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডার। লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, খাদ্য সাথী সহ একাধিক প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে রাজ্যবাসীর হাতে নগদের জোগান মেনটেন করাটাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় অর্থমন্ত্রীর হয়ে বাজেট পেশ করতে গিয়ে যখনই সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেন তখনই করতালিতে ফেটে পড়ে রাজ্য বিধানসভা। এবারের বাজেটে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।
সরকারের কৃষি, শিল্প, পরিকাঠামো সহ সবকটি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল নজর কাড়ার মতো।
নগদের সমস্যায় ভুগতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন থেকে শুরু করে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন সহ একাধিক অর্থনীতিবিদ বারবার যখন কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছেন মানুষের হাতে নগদের জোগান দিতে ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নগদের পরিবর্তে ব্যাঙ্ক মারফত গ্যারান্টেড রীতি চালু করেছেন ব্যবসায়ীদের জন্য। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এতে ভারতীয় অর্থনীতিতে সামগ্রিকভাবে বড় ধরনের কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আর অর্থনীতিতে যদি ইতিবাচক প্রভাব না পড়ে তাহলে বৃদ্ধির হার ব্যাহত হবে।
অর্থনীতিবিদেরা ঠিক এই জায়গাটাতেই মমতার সরকারকে একশোয় একশো দিচ্ছেন। মমতার সরকার তার বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে শহুরে কিংবা গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী প্রান্তিক মানুষগুলোর হাতে নগদ জুগিয়ে পরোক্ষভাবে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করতে চাইছেন। আর বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে তবেই অর্থনীতির চাকাটা অনেকটা জোরে ঘুরতে শুরু করবে। যার প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে পড়বে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে। তৈরি হবে কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ।
দেখে নেওয়া যাক এবারের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিভিন্ন খাতে মোট কত টাকা বরাদ্দ করেছে।
- লক্ষ্মীর ভান্ডার ১০ হাজার কোটি টাকা
- কৃষক বন্ধু প্রকল্প ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা
- শিক্ষা ঋণ কার্ড ২৫০ কোটি টাকা
- দুয়ারে রেশন প্রকল্প ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা
- নিঃশুল্ক রেশন প্রকল্প ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা
- স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প ১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা
- করোনা মোকাবিলায় ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা
রাজকোষে বিপুল ঘাটতি ও পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ৫ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮৩৩.৮৯ কোটি টাকা হলেও রাজ্যের অর্থনীতিকে সচল রাখতে মমতার সরকার যে জনমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা দেশের অধিকাংশ অর্থনীতিবিদদের সমীহ আদায় করে নিয়েছে। কেন্দ্র যখন দেশবাসীর হাতে নগদ তুলে দিতে অপারগ ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে থেকে অতিমারির সময় যে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন সে কথাই ফুটে উঠেছে এবারের রাজ্য বাজেটে।
ব্যুরো রিপোর্ট, বিজনেস প্রাইম নিউজ।