কলা গাছের ফেলা যায়না কিছুই। একজন কৃষকের ভাত, কাপড়ের দায়িত্ব একা নিতে পারে কলা গাছ। তাই কলা চাষ বর্তমানে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে। সারা বছর কলার চাহিদা মোটের উপর একরকম থাকলেও ছট পুজোতে কলার চাহিদা ওঠে তুঙ্গে। ফলে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে কলা ব্যবসা চরমে পৌঁছয়। তারই একটুকরো ছবি ধরা পড়ল দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া জেলায়। যেখানে ছট পুজোর আগে কলা অর্থনীতি পৌঁছয় চরমে।

নদিয়া জেলার রানাঘাট এক নম্বর ও দু নম্বর ব্লকের বেশ কিছু কৃষক কয়েকশো হেক্টর জমিতে এখন শুধুই কলা চাষ করেন। রাতারাতি গড়ে উঠেছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ১২টি কলার আড়ত। এখান থেকে বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে ছট পূজার জন্য কলা যায়। সেই ফলনের ছবিটাই হবিবপুরের পাইকারি বাজারে ধরা পরল আমাদের ক্যামেরায়।

এখানকার বারোটি আড়তে এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। চাষিরা কেউ ইঞ্জিনভ্যান করে কেউবা আবার টোটোতে করে কলা নিয়ে আসছেন বিভিন্ন আড়তে। আসছেন ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও।
ইনি মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাড়ি উত্তর প্রদেশ। পেশায় কলা ব্যবসায়ী। ট্রাকে করে এখানকার কলা নিয়ে যাচ্ছেন বিহারের বিভিন্ন জেলায় এবং উত্তরপ্রদেশে। ইনি হিমাংশু ঘোষ। বাড়ি হবিবপুর। পেশায় চাষী। ইনিও খুশি কলা চাষ করেই। এই সময় ঘরে তোলেন সারা বছরের আয়।

২০১৯ সাল থেকেই রাজ্য সরকার বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের এই জেলায় কলা চাষের ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এলাকার অগ্রগতি দেখে খুশি স্থানীয় রামনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সদস্যা অর্পিতা সিংহ।

আড়তগুলি এখানে গড়ে তুলেছে একটি স্বতন্ত্র ব্যবসার বাজার। একটা বিরাট বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিতি বাড়ছে হবিবপুর বাজারের। কলা চাষকে কেন্দ্র করে। এখানকার চাঁপা কলা ছট পুজোর বাজারে বেশ ভালো দামেই বিকোচ্ছে ভিন রাজ্যগুলিতে। ইনি সুবল প্রামাণিক। দীর্ঘদিন কাজ করছেন কলার আড়তে।

কলা প্রচলিত চাষে বাংলার বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও বর্তমানে অপ্রচলিত পদ্ধতিতে কলা চাষ দেখিয়েছে আয়ের উৎস। আর এইভাবে চাষ করে কলার বাজারে ছট পুজোর সময় ব্যবসা পৌঁছে যায় তুঙ্গে। বহু কৃষকই তাই কলা চাষ করেই নিজের রুটিরুজির ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন। গোটা বাংলায় যেভাবে ছট পুজো হয়ে থাকে তাতে করে প্রচলিত বা অপ্রচলিত পদ্ধতিতে কলা চাষ যে অচিরেই বাংলার অর্থনীতির মানচিত্রে বিশেষ জায়গা করে নেবে সেই নিয়ে দ্বিমত নেই। নদিয়ার কলা চাষে সেই ছবিরই প্রতিফলন হয়েছে।

সুব্রত সরকার
নদিয়া