Trending
দেখতে দেখতে হাজির ২০২৩। পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, গত দু বছরে অনেক বদল এসেছে আমাদের জীবনে। লোকে বলে, অতীতে বাঁচতে নেই। কিন্তু ভবিষ্যৎ যখন সেই অতীতেরই পরিপূরক, তখন অতীতে বাঁচতে সমস্যা নেই। এখন ভবিষ্যৎ বলতে শুধুই প্রযুক্তি। আর যে ভবিষ্যতের শুরুটা সেই অতীতেই। লেটস গো ব্যাক টু ২০২০। করোনা অতিমারি। যার জেরে আজ আমরা পুরোটাই প্রযুক্তি নির্ভর। হ্যাঁ, মানে প্রযুক্তি নির্ভরই ছিলাম, তবে অতিমারির জেরে আমরা আরও একটু বেশি প্রযুক্তি নির্ভর। পড়াশোনা থেকে কর্মক্ষেত্র- প্রযুক্তিই ব্রহ্মাস্ত্র। আর নতুন বছরে প্রযুক্তি নির্ভরতা যে আরও বাড়বে, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩-এ নাকি আরও রমরমা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটির বাজার। কিন্তু এই বিষয়টা মোটেই এতটা সহজভাবে নেবার নয়। একবার ভাবুন, এমনিই বেকারত্বের থাবা, তার ওপর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বাজার গরম হলে কর্মক্ষেত্রে আপনার গদিটি সুরক্ষিত থাকবে তো?
এই বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগে, একবার বরং ঝটপট দেখে নেই, ২০২৩ এ কী কী সম্ভাবনা আনছে প্রযুক্তিক্ষেত্র? ২০২৩ সালে নাকি মেটার মত বেশ কয়েকটি বড়সড় সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ড এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি নিয়ে আসতে চলেছে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশনে। যারা জানেন না, এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি কী? তাদের জন্য বলে রাখি, মেটাভার্সের নাম শুনেছেন তো? মেটাভার্স হচ্ছে একরকম এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি, যেখানে থ্রি ডি প্রোজেকশনে একটা বিকল্প দুনিয়া তৈরি করা হয়। ইনফ্যাক্ট এই ক্ষেত্রে আরও উন্নতির জন্য আরও লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করছে মেটা। সব মিলিয়ে 2023 সালে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা মেটাভার্সের মাধ্যমে এক অন্যতম অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে চলেছেন। শুধু এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটিই নয়, আপডেটেড হতে চলেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বাজারও। স্মার্ট ফোন থেকে স্মার্ট টিভি, কিংবা আপনার হাতের স্মার্ট ওয়াচ- আমাদের জীবন এখনই অনেকটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীল। ২০২৩-এ সেই নির্ভরতা আরও বাড়বে। AI-র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগামী দিনে আর অনেক বেশি মানুষের মতো হয়ে উঠতে চলেছে রোবটেরা। যা লোকবল কমিয়ে কাজের মান উন্নত করতে সাহায্য করছে। মানুষের কাজ ক্রমশ কমিয়ে দিচ্ছে রোবট। সেটা একদিক থেকে যেমন আশার কথা, তেমনই দুশ্চিন্তারও। কেন? কারণ এমনটা হলে বেকারত্বের হার আরও বাড়বে। বাড়বে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। কিন্তু বাস্তব কি সেই একই কথা বলছে?
বাস্তব কিন্তু একেবারে উল্টো কথা বলছে। AI নিয়ে ভয় পাবেন না। এটি লং টার্ম জব গ্রোথকে পরিচালিত করবে। কয়েক দশক আগের কথাই ভাবুন না। ইন্টারনেট যখন হাই স্পিডে গোটা বিশ্বকে গ্রাস করছে, তখনও কি ইন্টারনেট নিয়ে মানুষের প্যালপিটেশন কম ছিল? আর শেষমেশ কি হল? সংশয় থাকা সত্ত্বেও লক্ষাধিক কর্মসংস্থান তৈরি করেছে প্রযুক্তি। যা আমেরিকার জিডিপিতে ভালোরকম প্রভাব ফেলেছে। আর আজ এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করতে প্রস্তুত। PwC-এর গ্লোবাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্টাডি বলছে ২০৩০ সালের মধ্যে AI আনুমানিক ১৫.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট দেবে বিশ্বঅর্থনীতিকে। রিপোর্ট বলছে, এআই কর্মক্ষেত্রকে অটোমেটেড করবে, এটা ঠিক, কিন্তু তাই বলে এটা বেকারত্ব তৈরি করবে, এমনটা কখনই নয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ফিউচার অফ জবস ২০২০’ –এর রিপোর্টে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, AI-এর সুবাদে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮৫ মিলিয়ন মানুষ কর্মচ্যুত হবেন এবং এর পাশাপাশি ৯৭ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, এখন কোম্পানিগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে রিস্কিলিং বা আপস্কিলিং-এর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে। আগামী পাঁচ বছরে কোন সংস্থার অন্তত ৫০ শতাংশ কর্মীকে নতুন প্রযুক্তিতে অভ্যাস করাতে আপস্কিলিং বা রিস্কিলিং-এর প্রয়োজন পড়বে। কারণ এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্রিয়েটিভিটি, লিডারশিপ এবং ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিম্যান্ড বাড়বে। এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা যদি এটাকে বাড়তি খরচ বলে মনে করেন, তাহলে কিন্তু ভুল হবে। বরং এটাকে ভবিষ্যতের বিনিয়োগ হিসেবে দেখলে ভালো হয়। সবশেষে, AI-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সকলের মধ্যে একটা অন্যরকম ধারণা থাকলেও বাস্তবে কিন্তু দেখা যাচ্ছে সামাজিক ক্ষেত্রে AI একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।