Trending
স্টক মার্কেট এমনই একটা গভীর কুয়ো, যারা সারা দেশের অর্থের অভাব ঘোচাতে পারে। স্ক্যাম ১৯৯২ ওয়েবসিরিজের যে ডায়লগটা সবচেয়ে ক্রেজ তুলেছিল ইয়াং জেনের মধ্যে। হর্ষদ মেহতা, স্টক মার্কেটের সবচেয়ে পরিচিত আর সবচেয়ে চর্চিত নাম। স্টক মার্কেট ম্যানুপুলেশন, ইনসাইডার ট্রেডিং, স্ক্যাম এই শব্দগুলো যাকে আস্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। বলা ভালো, জড়িয়ে রেখছিল। কারণ এখন এই পুরনো শব্দের সঙ্গে জুড়েছে নতুন নাম। হর্ষদের পর চর্চায় এবার আরশাদ। আরশাদ ওয়াসির, মুন্না ভাই এমবিবিএসের সার্কিট। কী, কেন, কীভাবে?
প্রথমেই শুরু করা যাক, কী হয়েছে থেকে। আপনারা যারা শেয়ার মার্কেট নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন এবং ছোট বড় ইনভেস্টররা রয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে স্টক মার্কেট শেয়ারকে ম্যানুপুলেট করার জন্য প্রায় ৪৪ জনের ওপর স্ট্রিক্ট অ্যাকশন নিয়েছে সেবি বা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া। যাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আরশাদ ওয়ারসি এবং জনপ্রিয় ইউটিউবার মনিশ মিশ্র। দেখুন শেয়ার মার্কেটে স্ক্যাম হওয়াটা নতুন কোন বিষয় নয়। বরং এর চেয়েও বড় বড় স্ক্যাম এর আগেও হয়েছে। তবে এই স্ক্যাম করার নতুন নতুন এই স্ট্রাটেজি যেটা বারবার মার্কেটে শঙ্কার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়।
গত দুদিন ধরে ইউটিউব পাম্প অ্যান্ড ডাম্প স্ক্যাম নিয়ে সরগরম দালাল স্ট্রিট। যারা জানেন না তাদের জন্য বলে রাখি, মূলত কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে এক্ষেত্রে পারটিকুলার একটা ইউটিউব চ্যানেল মারফৎ স্পেসিফিক একটা কোম্পানির শেয়ারকে ম্যানুপুলেট করা হয়। যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আরশাদ ওয়ারসি তার স্ত্রী জনপ্রিয় ইউটিউবার মানিশ মিশ্রা সহ আরও বেশ কয়েকজন। এনারা বেসিক্যালি প্রমোটার। এরা একটা কোম্পানি সম্বন্ধে মিসলিডিং ইনফরমেশন প্রমোট করে। মানুষকে ম্যানুপুলেট করে একটা কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য। তারপর যখন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে, তখন তারা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে। যতদিনে পর্দা ফাঁস হয়, ততদিনে সাধারণ মানুষের ভাঁড়ে মা ভবানীর দশা। আর এই প্রসেসকেই সেবি একটা নাম দিয়েছে। যার নাম পাম্প অ্যান্ড ডাম্প স্ক্যাম। মানে প্রথমে পাম্প করা হবে শেয়ার কেনার জন্য। তারপর তাকে ডাম্প করা হবে। আর যখন পুরো কাজটা সুন্দরভাবে শেষ হয়ে যাবে তখন সেই ইউটিউব চ্যানেল বা পারটিকুলার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ডিলিট করে দেওয়া হবে।
এবার জেনে নেওয়া যাক এত বড় একটা স্ক্যামের উৎসটা কী? ২০২২ সাল নাগাদ সেবি একটা কমপ্লেন্ট লেটার রিসিভ করে। যেখানে দুটো কোম্পানি মানে সাধনা ব্রডকাস্ট লিমিটেড এবং শার্পলাইন ব্রডকাস্ট লিমিটেডের শেয়ার প্রাইসের অস্বাভাবিক হাইক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এপ্রিল ২০২২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ইনভেস্টিগেশন চালায় সেবি। ঠিক তখনই দুটো কোম্পানির শেয়ারে সিগ্নিফিক্যান্ট ইনক্রিজ রেট তাদের নজরে আসে। ইনভেস্টিগেশন আরও ডিটেইলে হলে সামনে আসে মিসলিডিং ভিডিও-র বিষয়টা। জানানো হচ্ছিল, যে এই ব্রডকাস্টিং কোম্পানি দুটোকে নাকি আদানি গ্রুপ টেক-ওভার করতে চলেছে। এবং এক আমেরিকান কোম্পানি নাকি প্রায় ১১০০ন কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট করতে চলেছে এই এই দুটো ব্রডকাস্ট প্ল্যাটফর্মে। দেখুন ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিও-র সাজেশন দেখে ইনভেস্টমেন্ট আমরা কমবেশি অনেকেই করি। এক্ষেত্রেও সেটাই হয়। অদ্ভুতভাবে সাধনা ব্রডকাস্টের শেয়ার প্রাইস ৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর স্মল শেয়ার হোল্ডারস মানে যারা অল্প অঙ্কের টাকা ইনভেস্ট করেন, সেই সংখ্যাটা ২১০০ থেকে বেড়ে প্রায় ৫৬ হাজার হয়ে যায়। অন্যদিকে শার্পলাইন ব্রডকাস্ট লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডারের সংখ্যা ৫১৭ থেকে বেড়ে প্রায় ২০ হাজারের কাছাকাছি হয়ে যায়।
যেই শেয়ার প্রাইস এই হাইকে পৌঁছল সঙ্গে সঙ্গে সাধনা ব্রডকাস্টের ওনার থেকে শুরু করে আরশাদ ওয়ারসি তার স্ত্রী সহ আরও যারা প্রমটার ছিলেন, যারা জানতেন এই বিষয়টা, তারা ওই পিক পয়েন্টে পৌঁছে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে দিলেন। আর এমনভাবে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় ৪৫ জন মিলে প্রায় ৫৪ লক্ষ কোটি টাকা ইনকাম করেছে। আরশাদ ওয়ারসি এবং স্ত্রী এর থেকে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা প্রফিট করেছে। এই খবর সেবির কানে পৌঁছতেই স্ত্রিক্ট অ্যাকশন নিয়েছে তারা। সেবির তরফে জানানো হয়েছে, এই স্ক্যমের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে একটা এসক্রো অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব টাকা ফেরত দিতে হবে। এই নির্দেশের অন্যথা হলে ভবিষ্যতে সেবির আরও কঠিন সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী এক বছরের জন্য আরশাদ ওয়ারসি এই ৪৫ জনকে শেয়ার মার্কেট থেকে ব্যান করে দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে আরশাদ ওয়ারসির ভুল কোথায়? কেন ব্যান করা হল তার মতো একজন ইনভেস্টরকে। এই বিষয়ে বলার আগে আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো, যারা শেয়ার প্রাইস নিয়ে আমজনতাকে ম্যানুপুলেট করে তাদের সেবি আলাদা আলাদা ক্যাটেগরতে ক্লাসিফাই করে। যেমন ধরুন ইউটিউব চ্যানেলের ক্রিয়েটর, প্রমটার বা প্রফিট মেকার, ভলিউম ক্রিয়েটর, ইত্যাদি। তো এই ক্যাটেগরির মধ্যে ভলিউম ক্রিয়েটরের তালিকায় আরশাদ ওয়ারসি এবং তার পরিবারের নাম এনলিস্ট করে সেবি। বেসিক্যালি এরা সবাই মিলে এই কোম্পানির ট্রেড ভলিউমকে আর্টিফিশিয়ালি বাড়িয়েছে এবং ভুল ইনফরমেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ইনভেস্ট করতে ম্যানুপুলেট করেছে। আর এই ভাবে সাধারণ মানুষকে ম্যানুপুলেট করা is an offense under the prohibition of fraudulent and unfair trade practices.
যদিও আরশাদ ওয়ারসি টুইট করে নিজেকে ডিফেন্ড করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই স্ক্যামে তার এবং তার স্ত্রীর কোন লিঙ্ক নেই। তবে এর কতটা সত্যি এবং কতটা ভুয়ো, সে বিচারের ভার সেবিরই থাকুক।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।