Trending
মেসির দেশে হাহাকার। অর্থনীতির বড় কঠিন অসুখে ভুগছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। এখন সর্বত্র গরিবিয়ানা। দারিদ্র্যের ছাপ আরও প্রকট হয়ে পড়ছে। আর্জেন্টিনার লড়াই মুদ্রাস্ফীতির হারের সঙ্গে। যা বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কার্যত রেকর্ড তৈরি করেছে। দেশের সাধারণ মানুষের মনেও তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ। সরকারের প্রতি অনাস্থার প্রকাশ দেখা দিচ্ছে। অবস্থা যা দাঁড়াচ্ছে, দেশবাসীর নাভিশ্বাস উঠছে ঘরে-বাইরে। ডলারের নিরিখে দেশটার কারেন্সি পেসো দিচ্ছে শুধুই হতাশা। কিন্তু আর্জেন্টিনায় এমন ক্রাইসিস কেন? আর হাইপারইনফ্লেশনের জেরে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মেসির দেশের অর্থনীতি? আসুন, আজকের প্রতিবেদনে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক।
ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্ট বলছে, আর্জেন্টিনায় এখন বিশ্বের সবথেকে বেশি ইনফ্লেশন রেট। দেশের মুদ্রাস্ফীতি ছাপিয়ে গিয়েছে ১০০%। অনেকেই বলছেন, পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে না ভেঙে পড়ে লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ আর্জেন্টিনা। কিন্তু অর্থনীতি খাদের ধারে ক্রমশ আসতে থাকে সেই ২০১৮ সাল থেকেই। তারপর দেখা গিয়েছে, দেশের অ্যানুয়াল ইনফ্লেশন রেট ছাপিয়ে গিয়েছে ৫০%। যা চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়ায় ১০৩ শতাংশে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের দাবি, আর্জেন্টিনা যেরকম দীর্ঘমেয়াদী এক ইনফ্লেশনের সঙ্গে লড়াই করছে, তেমনটা আর অন্য কোন দেশ করছে না। দেশের ৪০% (চল্লিশ শতাংশ) মানুষ আজ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। ঘরে ঘরে হাহাকার, হতাশা। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে কেন?
একটি আন্তর্জাতিক সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, অর্থনীতির এই কঠিন অসুখে আর্জেন্টিনা আরও বেশি ভুগতে শুরু করে ২০১৮ সাল থেকে। যখন ডলারের নিরিখে পেসোর ভ্যালু দ্বিগুণের-ও বেশি কমে যায়। সেই সময় এগিয়ে এসেছিল আইএমএফ। একটা বিজনেস ফ্রেন্ডলি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালানোর খাতিরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মরিসিও ম্যাক্রিকে ৫৭ বিলিয়ন ডলার ধার দেয় ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড। মুশকিল হল, এই বিপুল অঙ্কের টাকাও আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে স্টেবিলাইজ করতে পারল না। ২০১৯ সালে নির্বাচনের সময় ঐ দেশের বহু সরকারি বন্ড জলের দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। ফলে ডিফল্ট হবার দোরগোরায় এসে থমকে যায় আর্জেন্টিনার অর্থনীতি। দেশের প্রেসিডেন্ট অ্যালবার্তো ফার্নান্ডেজ। তিনি ডিফল্ট হবার প্রক্রিয়ায় অনুঘটকের কাজ করলেন। দেশের প্রত্যেক মানুষের হাতে যেন টাকা থাকে, এই উদ্দ্যেশ্যে রাতারাতি টাকা প্রিন্ট করানোর নির্দেশ তিনি দেন। ততদিনে দেশে ঢুকে পড়েছে করোনা। এমনিতেই অর্থনীতি ধুঁকছিল। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেল। ইনফ্লেশন রেট আরও বৃদ্ধি পেল এক ধাক্কায়। কারেন্সি কন্ট্রোল করার যথাসাধ্য প্রয়াস চালান প্রেসিডেন্ট। কিন্তু দেখা যায়, দেশের বিজনেস এনভায়রনমেন্ট দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করল।
আর্জেন্টিনা আজ যে পরিস্থিতির সামনাসামনি হতে চলেছে, তা অর্থনীতির ইতিহাসে লিখে রাখার মতন একটা ঘটনা হতে চলেছে। ২০২৩ সালে মানে এই বছরে জিডিপি ড্রপ করবে আরও ৩%। স্বাভাবিকভাবেই দেশটার আমদানি করার ক্ষমতা ক্রমশ সীমাবদ্ধ হতে শুরু করবে। সেই প্রভাব ইতিমধ্যেই কিছুটা পড়তে শুরু করে দিয়েছে জনজীবনে। ধাক্কা খাবে সেই দেশের প্রধান কৃষিজাত ফসল উৎপাদন। কৃষিক্ষেত্রে এমনিই খরা দেখা যাচ্ছে। যেগুলির মধ্যে রয়েছে সয়াবিন, ভুট্টা এবং গম। এর উপর নির্ভর করে বহু মানুষের ইকোনমিক গ্রোথ, কর্মসংস্থান এবং ট্যাক্স। মনে করা হচ্ছে, দেশটার বর্তমান পরিস্থিতি যেরকম ঘোরালো হচ্ছে, তাতে আইএমএফের সঙ্গে যে ডিল হয়েছিল, সেটা হয়ত ক্রমশ অবনতির পথে যাবে।
আইএমএফ এবং ফার্নান্ডেজ প্রশাসনের মধ্যে ২০২২ সালে একটি ডিল হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আইএমএফ আর্জেন্টিনাকে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। কিন্তু সেটা আগের প্রশাসনের প্যাকেজের পরিবর্তে, নেগোশিয়েশন করে। মনে করা হচ্ছে, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে হয়ত এতো চট করে আর্জেন্টিনার পক্ষে পুরো ড্রিল ক্র্যাক করাটা যথেষ্ট কঠিন। এই মার্চ মাসের কথা। এক মাসের মধ্যে আর্জেন্টিনার খাবারের দাম বৃদ্ধি পায় ১০ শতাংশ মতন। আর্জেন্টিনার সর্ববৃহৎ শহর বুয়েনস আইরেসে মাংসের দাম ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এক ডলারের দাম পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ২৩০ টাকায়।
তবে একটা বিষয়। ওয়ার্ল্ড অফ স্ট্যাটিসটিক্স সম্প্রতি একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। দেখা গেল, সেই তালিকায় শুধু আর্জেন্টিনা নয়। এই মুদ্রাস্ফীতির লিস্টে রয়েছে আমরাও। শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা। তারপর রয়েছে তুরস্ক প্রায় ৫৫.১৮%। তালিকার তৃতীয় স্থানে রাশিয়া প্রায় ১১ শতাংশ, তারপর ব্রিটেন, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া হয়ে দশম স্থানে রয়েছে ভারত। আমাদের মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.৪৪ শতাংশ। তবে এক্ষেত্রে অনেক নিশ্চিন্তে রয়েছে চিন। সেখানে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ শতাংশ মতন। প্রিয় দর্শক, গোটা বিশ্ব জুড়েই আজ মন্দার আঁচ। কখনো শ্রীলঙ্কা, কখনো পাকিস্তান কখনো আর্জেন্টিনা। অর্থনীতির কঠিন অসুখ একবার জড়িয়ে ধরলে সেই অসুখ দেশের আভ্যন্তরীণ সিস্টেমকে একেবারে খতম করে দেয়। তবে আশা করা যায়, সেদিক থেকে অনেকটা নিরাপদে রয়েছে ভারত। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি যে একেবারে চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলে দিতে পারল না।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ