Trending
ঢোল-তাসা- নাগারা- কাতারে কাতারে মানুষ-তাদের হৈহুল্লোড়- সে এক রাজকীয় আয়োজন। ব্যস্ত শহর মুম্বাইয়ে ফেস্টিভ সিজন ছাড়া এমন দৃশ্য বিরল। তবে, গণেশ পুজোর বিসর্জন ছাড়াও যে মুম্বাইতে উৎসবের আমেজ ক্রিয়েট করা যায়, সেটা দেখিয়ে দিলেন টিম কুক। এই প্রথমবারের মতো অ্যাপল স্টোরের দরজা খুলল বাণিজ্য নগরী মুম্বাইতে। মুম্বাইয়ের বান্ড্রা কুরলা কমপ্লেক্সে প্রায় ২৮ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি অ্যাপলের এই মেগা স্টোর মেক ইন ইন্ডিয়া যাত্রাপথের অন্যতম প্রধান ক্যাটালিস্ট। ভারতে ঠিক ২৫ বছর সম্পন্ন করার পর ব্যাক টু ব্যাক দুটো স্টোর ওপেনিং আরও একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, অ্যাপলের কাছে ভারতের মার্কেট ঠিক কতটা ইম্পরট্যান্ট। কিন্তু ভারতের এতে ফায়দা কী? অ্যাপল প্রোডাক্টের দাম কমবে কি? আমাদের মতো সাধারণ মানুষ অ্যাপলের প্রোডাক্ট হাতে মিরর সেলফি তুলতে পারবো কি? জানব সবটাই।
সবার আগে জেনে নেওয়া যাক, অ্যাপলের এই স্টোরে এমন কী বিশেষত্ব আছে, যা আর পাঁচটা দেশের থেকে আলাদা? প্রাকৃতিক আলো, প্রকৃতির হাওয়া আর কাচের দেওয়ালের ভিতরে বসে আপনি যতক্ষন ইচ্ছে প্রোডাক্ট দেখতে পারেন এবং শিখতে পারেন। এমনকি স্টোরে কাস্টমার হ্যান্ডলিং-এর জন্য যাদের অ্যাপয়েন্ট করা হয়েছে, তাদেরও অ্যাপলের প্রোডাক্ট সম্বন্ধে বেশ ভাল রকমের এক্সপারটিজ রয়েছে। কারণ অ্যাপল স্টোর ইউজার এক্সপেরিয়েন্সের ওপর বেশি বিশ্বাস করে। আর এটাই তাদের বিশেষত্ব। এতদিন পর্যন্ত ভারতে রিটেইল স্টোরের মাধ্যমেই ব্যবসা বাড়িয়েছে টেক জায়েন্ট অ্যাপল। এবার পালা ডিটুসি মডেলে এন্ট্রি নেওয়ার। তাই তরিজুতিও হয়েছে কোমর বেঁধে। সব থেকে ভাইরাল হয়েছে মুম্বাইতে খোলা অ্যাপল স্টোরের লোগো। কাস্টমার রিচ বাড়ানোর জন্য মুম্বাইয়ের গ্ল্যামরাস কালো হলুদ ট্যাক্সির রংকেই থিম করেছে তারা। বেশ ইন্টারেস্টিং! এবার আসা যাক ভারতের কোথায় লাভ, সেই আলোচনায়।
ভারতে অ্যাপল স্টোর খোলাটা কিন্তু এত সহজ ছিলনা প্রথমে। হাজার একটা হারডল পেরনোর পর, ভারত সরকারের সঙ্গে শ’খানেক নেগোশিয়েশনের পর এটা সম্ভব হয়েছে। কারণ হল, ভারত সরকার যেকোনো বিদেশী কোম্পানির জন্য ১০০% এফডিআই কিন্তু কোনদিনই ধার্য করেননি। কিন্তু পরবর্তীতে সেই রুল কিছুটা রিল্যাক্সড হয়েছে। তবে বেশ কিছু শর্ত রেখে। ভারত সরকার জানিয়েছেন, যে বিদেশী প্রোডাক্ট বিক্রি হবে, তার ৩০% লোকালি সোর্সড হতে হবে। মানে আইফোন তৈরির ৩০% পার্টস লোকাল সোর্স থেকেই আনতে হবে। সোজা হিসেব। কারণ, নরেন্দ্র মোদী সরকার একটা কথাই মানেন। দ্যাট ইস, ‘ আত্মনির্ভর ভারত’। আর সেটাকে এনহান্স করতে বুস্ট করতে হবে ম্যানুফ্যাকচারিং। আর ম্যানুফ্যাকচারিং বুস্ট আপ হলে, ভারত হবে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব।
দুনিয়াকে দিওয়ানা বানিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে অ্যাপল। ভারতেও এমন দিওয়ানা কম নেই। নাহলে জাস্ট একবার দেখা করার অছিলায় ১৯৮৪ সালে তৈরি অ্যাপলের প্রথম কম্পিউটার উপহার দিতে চলে আসেন কেউ? সালারী জমিয়ে অ্যাপলের মোবাইল কেনার হিড়িক কম বেশি প্রায় অনেকেরই। ইনফ্যাক্ট দিন দিন এই চাহিদা আরও বড় হচ্ছে। নাহলে লাস্ট ফিনান্সিয়াল ইয়ারে ভারতে ৬ আরব ডলারের বিজনেস করতে পারে অ্যাপল? এখনও অবধি এটা কিন্তু রেকর্ড! হবে নাই বা কেন বলুন? চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে টেক জায়েন্ট অ্যাপলও যে এই ভারতের ওপর ভরসা করেছে। না না। প্রতিশ্রুতি নয়। প্রমাণ আছে। ২০২১ অবধি ভারতে আইফোন মডেলের মাত্র ১ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচার হত। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেটা কোথায় ঠেকেছে জানেন? ৭ শতাংশে। আর আগামী ২০২৫ -এর মধ্যে অ্যাপলের গ্লোবাল মার্কেটে ভারতের অংশিদারিত্ব প্রায় ২৫ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন মার্কেট হচ্ছে ইন্ডিয়া। আর সেটাকে কী করে নজর থেকে সরাতে পারেন টিম কুক? যদিও হাই প্রাইসের কারণে ভারতে মাত্র ৩ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে অ্যাপলের। কিন্তু এখন তো রিটেল শপ রয়েছে। মার্কেটে শেয়ার বাড়াতে আর কতক্ষণ? আপনি বলতেই পারেন যে, অ্যাপল নিজের সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা দেরি করে ফেলেছে। কিন্তু প্র্যাক্টিকালি ভাবলে, এটাই কিন্তু সঠিক সময়। ইন্ডিয়ার কারেন্ট জেনারেশনে একটা অদ্ভুত চেঞ্জ এসেছে। সবাই তাদের স্ট্যান্ডার্ড অফ লিভিং-কে বাড়াতে ব্যাস্ত। আর এর সুযোগ তো অ্যাপল নেবেই। তাছাড়াও গোটা বিশ্বের অতিমারির কারণে যখন অ্যাপল প্রোডাক্টের সেল কমছিল, তখন সেই অতিমারির ভয়াবহতাকে পরোয়া না করেই ভারতে র্যাপিড সেল বাড়ছিল অ্যাপলের। কাজেই লং টার্মে ভারত অ্যাপলের কাছে একটা স্ট্র্যাটেজিক মার্কেট। আমার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। অ্যাপল প্রোডাক্টের ক্রেজ, ভারতের ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট সবই হল। কিন্তু বেকারত্ব? ভারতে বেকারত্বের কাঁটা ঘায়ে কর্মসংস্থানের মলম লাগিয়ে, ভারতকে কি সারিয়ে তুলতে পারবে টিম কুকের প্ল্যানিং?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।