ধান, গমের মত প্রথাগত চাষে একজন কৃষকবন্ধু লাভবান হতেই পারেন। কিন্তু প্রথা ভাঙা চাষে উপার্জনকে ঠিকঠাক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক দিশা এবং আগ্রহ। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি যদি সঙ্গ দেয়। তাহলে প্রথাভাঙা চাষেও লাভের অঙ্ক দেখতে পারেন একজন কৃষক। তার হাতেগরম প্রমাণ আপেল কুল। সরস্বতী পুজোর আগে যার চাহিদা আকাশছোঁয়া।

উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের টুঙ্গিলবিল পাড়ার চাষি জীতেন বর্মণ। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপেল গাছ ও কুল গাছের মধ্যে কলম করেছেন তিনি। তারপর নিজের ১১ কাঠা জমিতে একটি, দুটি নয় একেবারে ১১১টি আপেল কুল গাছের বাগান করেন তিনি। অল্প খরচ এবং অল্প পরিশ্রমকে ব্যবহার করে তিনি যে আপেল কুলের গাছ করেছেন তা কার্যত নজিরবিহীন। এখন তাঁর গোটা বাগানে ফলন ধরেছে লাল-সবুজ রঙা এই আধ পাকা আপেল কুলের। এমনকি পাখি এবং বাদুরের উৎপাতের হাত থেকে গাছের ফলকে বাঁচাতে গোটা বাগানটাই ঘিরে ফেলেছেন নেট দিয়ে। কিন্তু কিভাবে করলেন এই আপেল কুল গাছের চাষ?

একটি গাছের পিছনে খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা মতন। গেল বছর তাঁর বাগান থেকে ফলন এসেছিল ২৭ কুইন্টাল মতন। আপেল কুল বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকা কেজি দরে। চাষি জীতেন বর্মণ এই পরিমাণ আপেল কুল বিক্রি করে আয় করেছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে তাঁর বাগানে ফলন হয়েছে আরও বেশি। যা এই বছরে তিনি বিক্রি করবেন পাইকারি সহ খোলা বাজারে।

প্রথাভাঙ্গা এই আপেল কুল চাষ ইতিমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে সরকারি স্তরে। এখন সরকারের লক্ষ্য আপেল কুল চাষিদের আর্থিকভাবে অথবা প্রযুক্তিগত দিক থেকে সহযোগিতা করার।

আশ্বিন মাসে গাছে ফুল আসে। আর ফল বাজারজাত করার সময় এলে জীতেন বর্মণের মুখের হাসি অনেকটাই চওড়া হয়। এই বছর যা ফলন হয়েছে তাতে আপেল কুল বিক্রি করে কৃষক জীতেন বর্মণ উপার্জন করতে পারেন আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকা। তাঁর এত বছরের পরিশ্রম অবশ্যই সার্থক হবে। জীতেন বর্মণের এই আপেল কুল চাষ জেলার কৃষকদের মধ্যে বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। তিনিও একইসঙ্গে অন্যান্য কৃষকবন্ধুদের এই আপেল কুল চাষে আগ্রহ দেখাতে বলছেন। প্রয়োজনে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ দিতেও রাজি উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের টুঙ্গিলবিল পাড়ার চাষি জীতেন বর্মণ।

অনুপ জয়সোয়াল
উত্তর দিনাজপুর