Daily
জম্মু-কাশ্মীরের সার্বিক উন্নতির দিক থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে না কেন্দ্র। সেটা শুধু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। সেখানকার সাধারণ মানুষের আয়ের পথটাও যাতে আরও মসৃণ হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রয়েছে কেন্দ্রের। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে বড়সড় পদক্ষেপ নিচ্ছে মোদী প্রশাসন। আর তাই জম্মু-কাশ্মীরের আপেল চাষিদের পাশে দাঁড়াল কেন্দ্র। মোদী নির্দেশ, যত যাই হয়ে যাক কম দামে আপেল আমদানি আর নয়। এবার আপনি হয়ত ভাবছেন, তাহলে কি বাজারে আপেলের দাম বাড়তে পারে? কারণ জম্মু-কাশ্মীরে আপেলের ফলন ভালো হলেও দামও ভালো হয়। কম দামে আপেল পাওয়া না-গেলে মুখ ঘুরিয়ে নেবে নাতো ক্রেতারা? আসুন এই নিয়েই বলি আজকের বিশেষ প্রতিবেদন।
কোন কোন দেশ ভারতে আপেল রফতানি করে জানেন? তালিকায় রয়েছে ইরান, আফগানিস্তান, ব্রাজিল, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, চিলি, ইতালি, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, আমেরিকা এবং পোল্যান্ড। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আপেলের জোগান দেয় ইরান। ইরানের আপেল স্বাদে ভালো আবার দামেও কম। মুশকিল হচ্ছে, কম দামের আপেলেই ভালোরকম ছেয়ে গেছে দেশের বাজার। ক্রেতারাও কোন কিছুর বিচার না-করে কম দামে ইরানের আপেল কিনছেন। তার জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কাশ্মীরের আপেল চাষিরা। এই নিয়ে কাশ্মীরের আপেল চাষিদের ভালোরকম ক্ষোভ জমা হয়েছিল। তাঁরা বহুদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন, দেশের বাজারে আপেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও জম্মু-কাশ্মীরের আপেল চাষিরা লাভের গুড় পাচ্ছিলেন না। জম্মু-কাশ্মীরের আবহাওয়া আপেল চাষের জন্য আদর্শ। আপেলের ফলন হয় ভালো। কিন্তু দাম একটু বেশি থাকায় ক্রেতাদের হাতে উঠছিল এই কম দামের আপেল। স্বাভাবিকভাবেই, জেকে-র আপেল চাষিদের মধ্যে একটা ক্ষোভ জমা হচ্ছিল।
আশা জোগাতে এবার মোদী সরকার নিল মাস্টারপ্ল্যান। আপেল চাষিদের জন্য এলো সুখবর। মোদী সরকারের বক্তব্য, ৫০ টাকার কম দামে আপেল আমদানি করা আর যাবে না। অর্থাৎ লাগু হল নিষেধাজ্ঞা। আপেল আমদানিকারকদের কেন্দ্রের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আপেল যদি নিতেই হয় তাহলে দেশের আভ্যন্তরীণ বাজার থেকেই আপেল সংগ্রহ করতে হবে। একমাত্র ভুটান ছাড়া আর অন্য কোন দেশ থেকেই ৫০ টাকার কমে আপেল আমদানি করা যাবে না। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত আবার নতুন করে চিন্তা বাড়াল বাজারে। ক্রেতাদের একাংশ মনে করছেন, এভাবে যদি বাইরের দেশ থেকে আপেল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দেশের বাজারে আপেলের মূল্যবৃদ্ধি হতেই পারে। কিন্তু ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড জানিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে বাজারে আপেলের দাম যেমন বাড়বে না, তেমনই আবার আপেলের মানের উন্নতি হবে। অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীরে যে আপেলের ফলন অনেক ভালো হয়, সেই সকল আপেলের বিক্রিই দেশের বাজারে করতে হবে। অবশ্যই ভুটান ছাড়া। এতে করে আপেলের চাহিদাতেও ভাটা পড়বে না। কাশ্মীরের আপেল চাষিদের যে দীর্ঘদিনের একটা আক্ষেপ এবং অভিযোগ ছিল যে, আপেল চাষ করলেও আভ্যন্তরীণ বাজারে তাঁরা দাম পাচ্ছেন না, সেই অভিযোগ অচিরেই ঘুচে যাবে। একইসঙ্গে হাসি ফুটবে কাশ্মীরের আপেল চাষিদের মুখে।
এখানেই ছোট একটা পরিসংখ্যান। চিলি, ইতালি এবং তুরস্ক থেকে চলতি বছরে এ যাবত পর্যন্ত আপেল আমদানি করা হয়েছে প্রায় ২৬০.৩৭ মিলিয়ন ডলার মতন। তারও আগে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে আপেলের আমদানি করা হয়েছিল প্রায় ৩৮৫ মিলিয়ন ডলারের মত আপেল। এমনকি, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে পোল্যান্ড থেকে আপেলের আমদানি বৃদ্ধি পায় ৮৩ শতাংশের একটু বেশি। তবে ফ্রান্স, আফগানিস্তান বা ইরান থেকে আপেল আমদানি কিছুটা কমেছে। আপনারা যদি একটা বিষয় ভালো করে খেয়াল করেন তো দেখবেন, বছর বছর কিন্তু আপেলের আমদানি কমাতে বদ্ধপরিকর মোদী সরকার। আর এবার তো সাফ নির্দেশ দিয়েই দেওয়া হল। আপনারা কি মনে করেন? কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত কি একেবারে সঠিক? আপেলের দাম দেশের বাজারে বৃদ্ধি পাবে নাতো? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন আর সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ