Trending
মানুষের সঙ্গে পশুর যুদ্ধ- সেয়ানে সেয়ানে হতে পারে? মানুষ বুদ্ধিমান বাস্তবে। কিন্তু চলচ্চিত্রে চচ্চড়ি হয়েছে এই যুদ্ধ। পশুর কাছে গো-হারান হারছে মানুষ। আর খুব বেশিদিন নয়। হয়ত পশুর কারণে এবার মানুষ একেবারে ভোঁভা হয়ে যাবে বাংলা, মুম্বই বেল্ট থেকে। কথা হচ্ছে জিৎ আর রণবীর কপুরকে নিয়ে। দুজনেই তারকা- একজন আঞ্চলিক আর অন্যজন জাতীয় স্তরে। মানছি, এই তফাৎ সেয়ানে সেয়ানে হবার নয়। তবু পশুর সঙ্গে মানুষের বক্স অফিসে টেক্কা দেবার চেষ্টা করার জন্য অন্তত কলজের জোর তো রাখতেই হয় নাকি? তাহলে অসুবিধে কোথায়? সেটাই বলব আজকের প্রতিবেদনে।
বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান। প্রথম কথা- দাঁড়িয়ে হবেটা কী? কথাটা খুব স্বার্থপরের মত মনে হলেও বলছি কয়েকটা কারণ। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের কথা ভুলে যান। অন্তত ন্যাশনাল লেভেলেও একটা সময় যে বাংলা সিনেমা তৈরি হত, হিন্দিতে তার রিমেক হত। যুগে যুগে সেই ট্র্যাডিশন এখন শেষ। বাংলার হাতে কিছু নেই আজ। টিমটিম করে জ্বলছে এই শিখা। আপনারা এতদিনে কান্তারা চ্যাপ্টার ওয়ানের ফার্স্ট লুক নিশ্চয়ই দেখে নিয়েছেন। বাংলা ডাবিং এ রিলিজ করছে কান্তারা। মানে দক্ষিণী সিনেমা বাজার দখল করছে বাংলার বাজার। আর যদি বাংলার অডিয়েন্সের কথা বলেন, ভেরি স্যরি, বাঙালি সেটাই চাইবে যে ছবি তাদের গুজবাম্প দেবে। আধুনিক বাংলা সিনেমাকে শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি, সেই কনটেন্ট আমরা পাচ্ছি না পরিচালক বা প্রযোজকদের কাছ থেকে। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, দক্ষিণী সিনেমার বাজেট আর বাংলা সিনেমার বাজেট? তাহলে মনে করাই, চাঁদের পাহাড়ের বাজেট কিন্তু বাংলা সিনেমার নিরিখে যথেষ্ট ছিল। সিনেমায় পরিচালকের প্রয়াস কম ছিল না। মোটের ওপর কিন্তু সিনেমা হিট করে। কিন্তু এখন যে সেই ফ্যামিলি ড্রামা এবং ওল্ড ওয়াইন ইন আ নিউ বটল কনসেপ্ট বাংলা করছে সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলার পরাজয়- সেটা মেনে নিতে তো হবেই।
অ্যানিমাল- রণবীরের যে সিনেমা নিয়ে এখন চর্চা তুঙ্গে, দু তিন দিনে বক্স অফিস ২০০ কোটি পার করে ফেলেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই হারিয়ে যাবে। পশুর দৌড় মানুষকে পিছনে ফেলে দেবে সেটাও ঠিক। মানুষ এক হপ্তায় আয় করেছে দেড় কোটিরও কম। এদিকে বাজেট মনে হয় ১০ কোটি। অর্থাৎ ডাহা ফ্লপ। তারপরেও এই লড়াই অসম। রণবীর কাপুরের ইমেজ আর জিতের ইমেজ এক নয়। তারপরেও কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতন। সাউথের সিনেমা যেভাবে আজ দেশের বক্স অফিসে মাতামাতি করছে, তারপর দেখুন অ্যানিমালের জন্য কিন্তু দক্ষিণে বড়সড় প্রোমোশন চালিয়েছে পরিচালক, প্রযোজকরা। পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা- তিনি নিজেও মনে হয় দক্ষিণের। কবীর সিং দিয়ে বলিউডে শহীদ কপুরের খরা কাটিয়েছিলেন। কিন্তু তখনো সাউথের সিনেমা এভাবে বাজার দখল করে নি। জাম্প কাটে আজকের টাইমফ্রেমকে দেখুন। যত বড় বলিউড তারকাই থাকুক না কেন, এখন বলিউড সাউথের সঙ্গে খিচুড়ির চেষ্টা করছে। সত্যি বলতে সেটা উপাদেয় হচ্ছে অধিকাংশ সময়। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন রশ্মিকা মন্দানা। দক্ষিণের অভিনেত্রী তিনি। তবে এখানেই ক্ষান্ত না থেকে সাউথের প্রচারে কোন কসুর ছাড়ছে না বলিউড। যেমন এই অ্যানিমালের কথাই ধরা যাক। ঝোড়ো প্রোমোশন চালিয়েছেন হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটকে। এছাড়া মহেশ বাবু, রাজামৌলির মত পরিচালকদের প্রোমোশনে ডেকে এনেছে অ্যানিমালের টিম। এবার মনে হয়, বাংলার সেই পথে হাঁটা উচিৎ। কনটেন্ট, টেকনোলজির সঙ্গে দক্ষিণে প্রোমোশন।
জিতের প্রসঙ্গে আসা যাক। মানুষ কবে এলো সেটা জিতের ডাইহার্ড ফ্যান ছাড়া তেমন কেউ জানতেই পারেন নি। কিন্তু জিৎ একটা জায়গায় ফ্রন্ট ফুটে খেলছেন। আর সেটা হচ্ছে বাজি রাখছেন নিজেকে। বাংলা যখন একদিকে মোটের ওপর সাদামাটা কনটেন্ট নিয়ে নাড়াঘাঁটা করতে করতে সময় হারিয়ে ফেলছে, তখন জিৎ নিজের একটা জায়গা ধরে রেখেছে। ফ্যামিলি ড্রামা- যা এতকাল ধরে বাঙালি দর্শকের রক্তে, তার কিছুটা উল্টো স্রোতে হাঁটছে জিৎ। তার যা ইমেজ একটা সময় রিঙ্গো তৈরি করেছিল ক্রান্তিতে, সেই ইমেজ বা সেই ঝাঁঝ এখনো হারাতে তিনি দেন নি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে অন্য জায়গায়। এক প্রোমোশন, দুই কনটেন্ট। জিতের এই প্রয়াসকে তাচ্ছিল্য করার কোন জায়গা নেই ঠিকই। কিন্তু আজকের টাইম ফ্রেমে দাঁড়িয়ে যদি বলিউডেও জায়গা করতে হয়, তার জন্য দক্ষিণ ভারতে পা রাখতেই হবে। বাংলার নিরিখে বড় বাজেটে সিনেমা তৈরি করে, শুধু বাংলা আর হিন্দি বেল্টে প্রোমোশন করে কি বলিউডে জায়গা করা সম্ভব? সেদিক থেকে যীশু তো বুদ্ধিমানের মত কাজ করেছেন। নিজেকে ভেঙ্গেচুড়ে ফেলে দিয়েছেন দক্ষিণী সিনেমার হাতে। সত্যি বলতে গেলে, সাউথে কিন্তু নিজের জায়গা তৈরি করছেন যীশু। আর সাউথে এখন ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লাইমলাইট। সুতরাং সাউথে যদি কোনভাবে নিজেকে পপুলার করা যায় তাহলে বলিউডের নজরে পড়তে খুব বেশি টাইম লাগবে না। দশ কোটির বাজেট হলেও বুদ্ধি করে প্রোডাকশন করতে হবে। তারপর বাংলা এবং দক্ষিণের বেল্টে সিনেমার প্রোমোশন করতে হবে। ডাবিং করতে হবে হিন্দি সহ দক্ষিণের ভাষায়। আশা দেখা যেতে পারে, যদি এভাবে একটা সূত্র খুঁজতে পারা যায় তাহলে বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান এই কথাটা বলার প্রয়োজন পড়বে না।
জিতের সুপারস্টার তকমা চিরকাল থাকুক। কিন্তু গল্প ভালো হলেও যে প্রোমোশনে বেশি নজর দিতেই হবে। বাংলার উচিৎ দক্ষিণে পৌঁছনো। সাউথের সঙ্গে হাত মেলালে বলিউডে পরিচিতি তৈরি হবে। আলাদা করে বলিউডে আঞ্চলিক তারকা কখনোই সেই জায়গায় পৌঁছতে পারবে না। কারণ, মানুষের সঙ্গে টেক্কা দেবার জন্য তো পশু বসে রয়েছে। আপনাদের কি মনে হয়, মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক শেয়ার মাস্ট। আর নতুন হলে ভুলবেন না সাবস্ক্রাইব করতে আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ