Trending
প্রায় ১৩০০ রেল স্টেশনের জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ! সম্প্রতি রেল মন্ত্রকের তরফ থেকে এই বিশাল অঙ্ক খরচের ব্যপারে দেওয়া হয়েছে গ্রিন সিগন্যাল। রেল স্টেশনগুলিকে ঢেলে সাজানোর কাজ করা হবে অমৃত ভারত স্কিমের মাধ্যমে। এই অর্থবর্ষে রেল মন্ত্রক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই টাকা খরচ করবে, যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৪০%। ভাবতে পারছেন? আসুন, আজকের এই ছোট প্রতিবেদনে আলোচনা করি, রেল দফতর কোথায় কত টাকা খরচ করবে আর কেনই বা রেল দফতর খরচ করতে চলেছে।
অমৃতকালে বা অমৃত মহোৎসবের আন্ডারে ভারতীয় রেলওয়ে পরিকল্পনা করছে ভারত জুড়ে বেশ রেল স্টেশনগুলিকে বিশ্বমানের করে তোলা হবে। তার জন্য প্রায়োরিটি বেসিসে দেশের ১২৭৫টি রেল স্টেশনকে বিশ্বমানের করে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছে রেল মন্ত্রক। রেল দফতরের যা পরিকল্পনা রয়েছে, সেই মতন প্রত্যেকটি ডিভিশনের ১৫টি রেল স্টেশন আলাদা করে আইডেন্টিফাই করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বাদ পড়বে না ছোট, ছোট স্টেশনগুলিও। অনেকেই বলছেন, রেল মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত কার্যত প্ল্যাটফর্মের ভোল পুরোপুরি পাল্টে দেবে। এখানেই জানিয়ে রাখি, বাদ নেই বাংলাও। এখনো পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, পশ্চিমবাংলার ৯৫টি স্টেশনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেল মন্ত্রক। যার মধ্যে রয়েছে রামপুরহাট, বর্ধমান, বোলপুর, শান্তিনিকেতন, নবদ্বীপধাম, খাগরাঘাট, কাটোয়া, তারকেশ্বর, শেওরাফুলি, বালি, আজিমগঞ্জ, ডানকুনি, সাইথিয়া, চন্দননগর, শিয়ালদহ, কৃষ্ণনগর, কল্যাণী, শান্তিপুর, ক্যানিং, সোনারপুর, বহরমপুর কোর্ট, বেথুয়াডহরি, বনগাঁ, কল্যাণী ঘোষপাড়া, নৈহাটি, ব্যারাকপুর, দমদম জংশন, গেদে, অণ্ডাল, সীতারামপুর, পাণ্ডবেশ্বর, সিউরি, পানাগড়, মালদা টাউন, নিউ ফারাক্কা, জঙ্গিপুর রোড, নিউ আলিপুরদুয়ার, হাসিমারা, ডালগাঁও, দিনহাটা, নিউ মাল জংশন, জলপাইগুড়ি, ধুপগুড়ি, ফালাকাটা, কামাক্ষ্যাগুড়ির মতন বেশ কিছু স্টেশন।
জানা গিয়েছে, এই গোটা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হবে পিপিপি মডেলের ওপর নির্ভর করে। পিপিপি মডেল অর্থাৎ পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ মডেল। রেল দফতরের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২৩ অর্থবর্ষে গোটা প্রোজেক্টটি কমপ্লিট করার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩,৮২৪ কোটি টাকা মতন। এবং ২০২২ অর্থবর্ষে সেই খরচের অঙ্ক ছিল আরও কম- মাত্র ১,৯৯৬ কোটি টাকা মতন। দেখুন, আমরা বেশ কয়েকদিন ধরেই শুনে আসছি, রেলের বেসরকারিকরণের কথা। যেখানে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থা একযোগে ভারতীয় রেলের খোলনলচে বদলে দেবার ব্যপারে উঠেপড়ে লাগছে। রেল মন্ত্রক দাবি করছে, বেসরকারিকরণ করলে সেক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মগুলো ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বমানের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হলে, সেক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মগুলি বাণিজ্যিকভাবে অনেকটা ব্যবহার করা যাবে। কারণ তার সঙ্গে যুক্ত থাকবে নিত্যদিনের যাত্রীদের আসা-যাওয়ার বিষয়। তাই যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য একটা খুব বড় ব্যপার। এই মাস্টারপ্ল্যান সম্পূর্ণ হলে যাত্রীরা যেমন প্ল্যাটফর্মগুলোতে পেয়ে যাবেন ফুড কোর্ট, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, তেমনই থাকবে ঝাঁ চকচকে টয়লেট, লিফট, এসক্যালেটর, ফ্রি ওয়াই-ফাই, কিয়স্ক বা স্টল। এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় জানিয়ে রাখি। বিশ্বমানের যে সকল স্টেশনগুলির ভোলবদলের জন্য রেল মন্ত্রক ভাবছে, এই সকল স্টেশনে স্থানীয় শিল্পীরা তাঁদের তৈরি নিজস্ব প্রোডাক্ট বিক্রি করার দুর্দান্ত সুযোগ পাবেন। ফলে, তাঁদের আর নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য অন্য কোথাও যেতে হবে না। এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ওয়ান স্টেশন, ওয়ান প্রোডাক্ট’।
গোটা দেশজুড়ে প্রতিদিন ১৩ হাজার ১৬৯-টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন যাতায়াত করে। দেশের ৭ হাজার ৩২৫টি স্টেশন কভার করে এই ট্রেনগুলি। রেল ভারতের যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। ভারতীয় রেল ছাড়া তাই যাত্রীদের কোন গতি নেই। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এদিকে নিত্যদিন যাত্রী সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর যত বৃদ্ধি পাচ্ছে যাত্রী সংখ্যা, ততই রেল মন্ত্রকের কাছে প্রায়োরিটি পাচ্ছে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টা। আর যে কারণেই বাংলা সহ দেশের এতোগুলো প্ল্যাটফর্ম ঢেলে সাজাতে চলেছে ভারতীয় রেল। আপনি কি মনে করেন? ভারতীয় রেলের এই প্রোজেক্ট বাস্তবায়িত হলে যাত্রী হিসেবে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন আপনি?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ