Trending
চুরির প্রকোপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে আমেরিকায়, কেন?
চকোলেট থেকে চিরুনি সবই রাখতে হচ্ছে কাঁচের শো-কেসে, কেন?
একের পর এক ঝাঁপ ফেলছে ওয়ালমার্টের মতন প্রথম সারির সংস্থা, কেন?
সাধারণ মানুষের হাতে কি দিনে দিনে চওড়া হচ্ছে টাকার অভাব, সেটাই বা কেন?
আমেরিকা বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এই ছবি, এই ছবি আর এই ছবি (পরপর হাইরাইজ বিল্ডিং-এর ফুটেজ/ছবি)। আকাশ ছুঁতে চলা হাইরাইজ বিল্ডিং, উন্নতমানের জীবনযাত্রা, ঝাঁ চকচকে পরিবেশ। তবেই না মার্কিন মুলুক। আমাদের ধারণা মার্কিন মুলুকে গরিবিয়ানা নেই। লো লাইফস্টাইল একেবারে নেই। মানুষের হাতে ডলার আর ডলার। নির্ঝঞ্ঝাট লাইফ লিড করার জন্য যদি মার্কিন মুলুকই অনেকটা মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত হয় তাহলে বলতেই হবে পুরোটা ঠিক নয়। কারণ এই ছবিটগুলো দেখুন (দারিদ্র্যের ফুটেজ/ছবি)। আমাদের একটা মাইন্ড সেট হয়ে গিয়েছে, আমেরিকা দারিদ্র্যকে কোনদিন জায়গা করে দেয়নি। তাই আমেরিকার প্রতিটি মানুষের কাছে ডলার রয়েছে যথেষ্ট। তারপরেও চুরি!
ইউনাইটেড স্টেটস অফ সেনসাস ব্যুরোর একটা রিপোর্ট বলছে, ২০২১ সালে আমেরিকায় গরিবিয়ানা ছিল ১১.৬ শতাংশ মতন। ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে গরিবিয়ানা কমলেও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে গরিবিয়ানা অনেকটাই বেড়ে যায়। আর ১৮ বছর থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে গরিবিয়ানা মোটের ওপর একই ছিল। ২০২০-র সমীক্ষা সেটাই বলছিল। কিন্তু এই রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে ২০২১ সালে। তারপর আমেরিকার সেনসাস ব্যুরো নতুন করে রিপোর্ট প্রকাশ করে নি। এরপর শুরু হল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আমেরিকার সহজাত স্বভাব যা সেটাই করল। ন্যাটোর কর্তৃত্ব ইউক্রেনে ফলাবার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সম্মুখ সমরে নেমে পড়ল মার্কিন প্রশাসন। বাইডেনের বক্তব্যে সায় দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ডি-ডলারাইজেশনের যুগে যেখানে বেশ কিছু শক্তিশালী দেশ আলাদা করে একটা কারেন্সি সিস্টেম চালু করতে চাইছে সেখানে ডলারের প্রভাব কোনভাবেই খর্ব করতে চায় না তারা। রাষ্ট্রনেতাদের এই সব কূটনীতির শিকার হতে হয় দেশবাসীকে। সেটাই হচ্ছে এখন আমেরিকায়।
আমেরিকায় চুরি, ছিনতাই করার মতন ট্র্যাডিশন আগে যে ছিল না সেটা নয়। এখন দেখা যাচ্ছে, দিনে দিনে যেন এই ধরণের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে কি ক্রমশ দুষ্কৃতিদের ঘুঘুর বাসা হয়ে উঠছে আমেরিকা? তার মানে ধরে নিতে হবে যে, আমেরিকায় সাধারণ মানুষের রোজগার কমছে, কমছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। স্পেশ্যালি দোকান, শপিং মলের মতো জায়গায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস চুরি হয়ে যাচ্ছে। সেটা ক্যাডবেরি হতে পারে, ওয়াশিং পাউডার হতে পারে, আবার টুথপেস্ট, ব্রাশও হতে পারে। চুরির প্রকোপ এমনই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে নাজেহাল হয়ে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি কতটা ঘোরালো হচ্ছে জানেন? ওয়ালমার্ট, টার্গেট গ্রুপের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রথম সারিরি মেডিসিন কোম্পানি যেমন সিভিএস, ওয়ালগ্রিনসের মতো সংস্থার কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তার মানে ওষুধ চুরির ঘটনাও হচ্ছে নাকি? দাঁড়ান দাঁড়ান। এখানেই শেষ নয়। হোম ডেকরের বিভিন্ন জিনিস এমনকি জুতো, জামা পর্যন্ত চুরি হচ্ছে। চুরি আটকাতে গেলে অপরাধীরা হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে। আর নেগেটিভ প্রভাব সরাসরি পড়ছে ব্যবসায়। অনেকেই বলছেন, যা অবস্থা তাতে পাঁচ মাসে চুরির পরিমাণ হয়ত বৃদ্ধি পেয়েছে ১২০ শতাংশ। কিন্তু কেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য এক এবং একমাত্র কারণ আর কিছুই নয়। আমেরিকার ইকোনমি। হ্যাঁ, রাশিয়ার সঙ্গে হাত ঘুরিয়ে যুদ্ধে নামলেও সেটা তাদের ইকোনমির ওপর ডিরেক্ট প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে ভিলেন হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। বিগত ১৮ মাসের মধ্যেই সুদের হার শূন্য থেকে ডিরেক্ট পৌঁছে গিয়েছে সাড়ে পাঁচ শতাংশে। ২২ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। তার জেরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গ্যালোপিং জাম্প দিচ্ছে। একটা তথ্য এখানেও দিয়ে রাখি। ২০২২ সালে একটা সমীক্ষা করে ন্যাশনাল রিটেল ফেডারেশন। সেই সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, খুচরো ব্যবসায়ীদের ক্ষতির অঙ্ক ২০২১ সাল থেকে বেড়ে মোট দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ কোটি ডলারে। কোন চোর ব্যবহার করছে ব্লো টর্চ, তো কোন চোর বন্দুক দেখিয়ে একের পর এক পণ্য ব্যাগের ভেতর পুরছে। বর্তমানে পরিস্থিতি কতটা শোচনীয়? সান ফ্রান্সিসকোয় চুরির জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাঁচ পাঁচটা শপিং স্টোর। শিকাগোয় এই বছর চারখানা আউটলেট বন্ধ করল ওয়ালমার্ট। মাস্ক পরে সংগঠিত অপরাধ করছে তারা। কোন এক স্টোর থেকে তো একেবারে ৩০ লক্ষ ডলারের পণ্য ছিনতাই করে নেয় চোরেরা।
তাহলে কি লিঙ্কনের আপন দেশে এখন আইন কানুন সর্বনেশে জায়গায় পৌঁছচ্ছে? নাকি দিন দিন কর্মনাশা হয়ে পড়ছে আমেরিকার আইনের পরিকাঠামো? ইকোনমিস্টদের বক্তব্য, মানুষের হাতে টাকার জোগান কমছে। এদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে বলেই অবস্থা আরও বেগতিক হচ্ছে। চুরির মতো অপরাধ যারা আগে কোনদিন করেনি তারাও বাধ্য হচ্ছে। আমেরিকার যারা প্রথম সারির ম্যানুফ্যাকচারিং সংস্থা রয়েছে তারা এতদিন পর্যন্ত নিজের ঘরের লোকেদের থেকে অনেক বেশি ভরসা করত চিনকে। সেই ভরসার জল এখন উপচে পড়েছে। মার্কিনী সংস্থাগুলো হাত কামড়াচ্ছে। চিনের বিকল্প তাই ভারত, ভিয়েতনাম। এশিয়ায় ম্যানুফ্যাকচারিং করানোর সুবিধে হচ্ছে, একটি সরু তার লাগানোর জন্য যেখানে আমেরিকার কোন নাগরিককে ডেলি ওয়েজেস হিসেবে যে টাকা ডলারে পেমেন্ট করতে হয়, তার থেকে অনেক কম পারিশ্রমিকে সেই কাজ করতে পারে ভারত-চিনের মতো দেশগুলো। আর যত কম পারিশ্রমিক তত বেশি লাভ। এখন চিন থেকে সরেও আসছে তারা। মার্কিন প্রশাসন ভারত, ভিয়েতনামের মতো দেশে নিজেদের প্লান্ট সেটআপ করছে। মোদ্দা কথা, দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে মার্কিন জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর দৌলতে ভারত, চিনের মতো জনবহুল দেশের একটা বড় অংশ যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনই কর্মনাশা হতে হচ্ছে খোদ নিজের দেশের মানুষদের। আমেরিকায় বর্তমানে কাঠ বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩.৮০ শতাংশ। অঙ্কের হিসেবে খুব যে কম সেটা বলা যাবে না। কারণ দেশটা বড় হলে কী হবে, সেই অনুপাতে জনসংখ্যা তো কম। আর দিনের শেষে আমেরিকার দাদাগিরি তো রয়েছেই। যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গ্লোবাল এরিনায় আমেরিকা নিজের গুড বয় ইমেজ ধরে রাখতে কোন কসুর করে না। সেই খেসারৎ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ