Agriculture news
কেউ চাষ করছেন পঁচিশ বছর, তো কেউ চাষ করছেন তিরিশ বছর। প্রকৃতির মর্জিমাফিক চাষবাস করতে হয় তাঁদের। সেক্ষেত্রে চাষবাসে ওঠাপড়া একটু থাকেই। আতঙ্ক জমা হয়, আবার সেটা মিটেও যায়। কিন্তু এবার যেন সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেল। চাষিদের ভাঁড়ার শূন্য হতে বসেছে। সংসার খরচ চালানোর মতন লাভটুকুও ওঠে নি। এই করুণ অবস্থার জন্য দায়ী গরম। তীব্র গরমের জন্য ক্ষেতের পর ক্ষেত শুধু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তরমুজ। চাষিদের এমন মর্মান্তিক পরিণতি লক্ষ্য করা গেল উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে। ছবিটা ধরা পড়ল বিজনেস প্রাইম নিউজের ক্যামেরায়।
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ ব্লকের নাগর নদীর চর তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত। কেউ চার বিঘে, তো কেউ পাঁচ বিঘে। ফি বছর জমির পর জমি জুড়ে শুধু তরমুজের ফলনই চোখে পড়ে। সেই তরমুজ চলে যায় লোকাল বাজারে তো বটেই, একইসঙ্গে কলকাতা সহ ভিন রাজ্যের বাজারে। তরমুজ চাষ করে মোটামুটি লাভের মুখ দেখতে পান তাঁরা। কিন্তু এই বছর সব হিসেব নিকেশ গেল একেবারে বদলে। ভীষণ গরমের জন্য একেবারে কমে গেল তরমুজের ফলন। যেটুকু হয়েছিল সেটুকুও গেছে নষ্ট হয়ে। যার ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন রায়গঞ্জ ব্লকের খারি শরিয়া বাঁধের নাগর নদী সংলগ্ন এলাকার কৃষকরা। চক্ষুকর্ণের বিবাদ ঘুচবে যদি চাষিদের বক্তব্য একবার শুনে নিতে পারেন।
জমিতে ফলন না-হলে সেই প্রভাব সরাসরি পড়ে স্থানীয় বাজারে। শুধু স্থানীয় বাজার বলেই নয়, ফলন ভালো না-হলে অন্য রাজ্যেও তার প্রভাব খুব একটা সুখকর হয় না। একটা ট্র্যাডিশন ছিল প্রত্যেক বছর। তরমুজের ফলন জবরদস্ত হতেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে মহাজনরা আসতেন। গাড়ি বোঝাই করে সেগুলো চলে যেত কলকাতা, দার্জিলিং, আসাম সহ বিভিন্ন রাজ্যে এবং অবশ্যই নেপালে। এই বছর একূল-ওকূল দু’কূল হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। বাজারে যে কালিয়াগঞ্জের তরমুজ বিক্রি শূন্যে এসে ঠেকেছে, সেটা বলছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই।
চাষিদের যা অবস্থা, এখন তাঁরা কার্যত দিশেহারা। কী করবেন, কোথায় যাবেন? অগত্যা চাষিদের ভরসা এখন সরকার। সরকারের কাছে তাঁরা জানাচ্ছেন আবেদন। এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় কিভাবে? সরকারের ওপর ভরসা রাখা ছাড়া তাঁরা আজ একেবারে নিরুপায়। যেখানে চাষিদের লাভের অঙ্ক তো দূর কী বাত, চাষের সামান্য পুঁজিটুকু পর্যন্ত ওঠেনি, আজ সেই চাষিদের জন্য সরকার কী করে সেটাই দেখার বিষয়।
অনুপ জয়সোয়াল
উত্তর দিনাজপুর