Daily
কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের যে প্রয়োজন রয়েছে, সেটা আজকের যুগে দাঁড়িয়ে কোন নতুন বিষয় নয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমাদের গ্রাম-বাংলার কৃষকবন্ধুরা যারা বহুদিন ধরে সাবেকি প্রথায় চাষ করে আসছেন, তাঁদের সেই পুরনো চিন্তা থেকে বের করে আনা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করাটা নিঃসন্দেহে একটু কঠিন। তবু প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। কারণ দিনের শেষে কৃষকের স্বার্থই মুখ্য। তাই কৃষিক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ড্রোন ব্যবহারের চাহিদা বাড়ানোর চেষ্টা জারি রয়েছে।
কৃষিক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার বহু আগেই শুরু হয়েছিল বিদেশে। ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের কৃষকরা তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেছে। কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলে সেটা দিনের শেষে যে চাষিবন্ধুদেরই মঙ্গল। আর যে কারণে গ্রাম বাংলার কৃষকদের ড্রোন ব্যবহারের সুবিধে কী কী সেই নিয়ে চলছে আলোচনা, দেখানো হচ্ছে ডেমো। সম্প্রতি এরিজ কোম্পানির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল সেই উদ্যোগ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের চককাশী গ্রামে কৃষকদের দেখানো হল কিভাবে ড্রোনের সাহায্যে ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব। কম সময়ে যে কাজ ড্রোন করে দিতে পারবে, সেই খাটুনি কৃষকদের আর করতে হবে না। ফলে, কৃষকবন্ধুদের হাত ধরে ড্রোনের ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে নতুন একটা দিক খুলে দেবে।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে ড্রোন ব্যবহার করলে কী কী সুবিধে একজন কৃষক পেতে পারেন? প্রথম, জলের অপচয়। আগে হাতে ধরে বিঘের পর বিঘেতে জল দিলে যে বিশাল পরিমাণ জলের অপচয় হত, ড্রোন ব্যবহার করলে সেই অপচয় অনেকটাই কমে যাবে। একইসঙ্গে সময়ের সাশ্রয়। একরের পর একর কৃষিজমিতে ওষুধ স্প্রে করার জন্য আগে যেখানে সময় লাগত ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা মতন, আজ ড্রোন ব্যবহার করলে সেটাই নেমে আসছে ৮ থেকে ৯ মিনিটে। এখানেই শেষ নয়। ড্রোনের মাধ্যমে ওষুধ স্প্রে করার জন্য ওষুধের পরিমাণ কিছুটা কম লাগছে। সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, কৃষকদের শ্রম এবং টাকা দুয়েরই সাশ্রয় হচ্ছে বেশ ভালোরকম। এই বিষয়ে কী বললেন কৌস্তভ সামন্ত, শুনে নেওয়া যাক।
এবার বিষয়টা হচ্ছে, ড্রোনের ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে বেশি কৃষকদের চিন্তায় রাখবে সেটা হল এর দাম। কার্যকরিতার মান অনুযায়ী নির্ভর করে ড্রোনের দাম। সেটা ৬ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে পৌঁছে যেতে পারে ১৬ লক্ষ টাকায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কৃষকরা কি আদৌ এতো টাকা দিয়ে ড্রোন কিনতে চাইবেন? এই বিষয়ে কৃষকদের বক্তব্য কী, সেটাও শুনে নেওয়া যাক।
কিন্তু এরিজ এগ্রো লিমিটেডের কৌস্তভ সামন্ত বলছেন অন্য কথা। তিনি বলছেন সরকারি প্রকল্পকে ব্যবহার করে কৃষকবন্ধুরা এই ড্রোন কিনতে পারেন। একবার কিনলে, অনেকদিনের জন্য হ্যাপা থেকে মুক্ত। তার জন্য চাষিরা কোথা থেকে কিনবেন বা কেনার সময় কতটা ছাড় পেতে পারেন, এই বিষয়ে কৌস্তভ সামন্ত জানাচ্ছেন,
কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় ড্রোনের ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্পেশ্যালি উত্তর ভারতে কৃষিজমিতে ড্রোন ব্যবহার আগের থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যেই কৃষিক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের চল আরও বেশি করে বাড়ানো উচিৎ। তার জন্য পশ্চিমবাংলার কৃষকদের প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করতে হবে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ড্রোন ব্যবহারে মনযোগী হতে হবে। তাহলেই কিন্তু আধুনিক কৃষিব্যবস্থার সার্বিক একটি রূপরেখা তৈরি হবে গোটা ভারতে। আপনার কী মনে হয়? আধুনিক কৃষিব্যবস্থার সর্বশ্রেষ্ঠ নমুনা কি তবে ড্রোন হতে পারে? মতামত জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে।
প্রসূন ব্যানার্জী
পূর্ব মেদিনীপুর