Trending
এক ডলারের দাম ভারতে ৮৩ টাকা মতন। ওদিকে এক ডলারের দাম আফগানিস্তানে ৭৫ টাকা মতন। জঙ্গি দেশ, মৌলবাদীদের দেশ হিসেবে পরিচিত আফগানিস্তান কিভাবে ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে? যখন বৈদেশিক সাহায্য- স্পেশ্যালি পশ্চিমি দেশ এবং আমেরিকা আফগানিস্তানের সঙ্গে ব্যবসাকে নামিয়ে এনেছে প্রায় শূন্যে, সেখানে দাঁড়িয়ে কিভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলল আফগানিস্তান? আজকের প্রতিবেদনে বলব সেই কথাটাই।
দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে আফগানিস্তান তালিবানের দখলে। সেই তালিবান যা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। যার হাতে বর্তমানে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ। আমেরিকার সেনারা আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিলে পর ভারতের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই দেশটায় সরকার গঠন করে তালিবান। তারপর থেকেই আফগানিস্তানের সকল প্রশাসনিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এই সংগঠন। তার জন্য নিয়ে এসেছে নানান নিয়ম। সাধারণ মানুষের ওপরেও চাপানো হয়েছে নানান নিষেধাজ্ঞা। তার মধ্যে অন্যতম মহিলাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একাধিক আইন। কট্টরপন্থী তালিবান খর্ব করেছে নারী স্বাধীনতার বিষয়টা। সেখানে আফগান মহিলাদের পড়াশুনো করে খুব বেশিদূর এগোনোর কোন পথ নেই। এমনকি যখন তখন তাঁরা বাইরেও বেরোতে পারেন না। যেতে পারেন না কোনরকম সিনেমাহল, হোটেল বা পার্কে। বিনোদনের সকল মুখ বন্ধ করে দিয়েছে তালিবান প্রশাসন। একান্ত বেরোতে হলে তখন আপাদমস্তক বোরখা চাপিয়েই বেরোতে হয়। আফগানিস্তানে সর্বত্র মহিলাদের অধিকার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তালিবান প্রশাসন। এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, এমন কট্টরপন্থী দেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করার রাস্তা বহু দেশ বন্ধ করেছে নিজে থেকে। আর সেই প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তালিবান সরকারকে কোনরকম স্বীকৃতি না দিলেও পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি তালিবানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলেছে রাশিয়া, চিন, ইরান, কাতার, মায়ানমার, বেলারুস, নর্থ কোরিয়ার মত দেশগুলি। তবে প্রশ্নটা হচ্ছে, যে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বর্তমানে এমন একটি সংগঠনের হাতে, সেই দেশের মুদ্রার সঙ্গে ডলারের ফারাক ভারতের থেকেও কম কী করে?
প্রথমে বলি, আফগানি মুদ্রা এবং ভারতীয় টাকার মধ্যে ফারাক একেবারে কম। এখানে ১ টাকা ওদের ৮৯ পয়সার সমান। বিনিময় হারের এই পরিসংখ্যান চলতি বছরের ৪ঠা সেপ্টেম্বরের। বর্তমানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরান এবং শ্রীলঙ্কার থেকে শক্তিশালী আফগানি মুদ্রা। আর ডলারের নিরিখে তো অনেকটা বটেই। কিন্তু অর্থনীতির বিস্ময় যে কিভাবে আফগানি মুদ্রা এভাবে ধীরে ধীরে শক্তি বাড়িয়ে চলেছে? অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পিছনে রয়েছে বাণিজ্যিক কাঠামো। আসলে আফগানিস্তান প্রচুর পরিমাণে ফল এবং নানান পণ্য রফতানি করে। উল্টে আমদানির অঙ্কটা সেই নিরিখে কম। বিভিন্ন রকমের ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল প্রোজেক্ট তারা চালু করেছে। বিদেশি মুদ্রা পাচার আটকে দিয়েছে, রফতানির পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এই সব কিছু ছাড়া কী (Key) রোল প্লে করেছে এখানকার খনিজ ভাণ্ডার। মার্বেল, তামা, সোনা, আকরিক লোহা, দস্তার মত পদার্থ তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। এই দেশটা যেন খনির দেশ। প্রায় ১৪০০-টি খনি রয়েছে আফগানিস্তানে। যেখানে পাওয়া যায় কয়লা, তামা, সোনা, লোহা, সীসা, ক্রোমাইটের মতন ধাতু। তবে এই সবকিছুর মধ্যে আফগান অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার জন্য তুরুপের তাস হল লিথিয়াম। খেয়াল রাখবেন, লিথিয়ামের কথা ভেবেই কিন্তু চিনের বিনিয়োগ রয়েছে ভালোরকম। বিদেশি বিনিয়োগ পেয়ে দেশটার রোজগার অন্য মাত্রায় গিয়েছে। আর রয়েছে বিদেশি অনুদান। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের জন্য প্রতি বছর ১৫-২০ কোটি ডলার অনুদান দেয়। আরেকটা বড় উদ্যোগ হল, তালিবান সরকার গঠনের পর নতুন করে আর কোন টাকা ছাপায় নি। ফলে ডলারের নিরিখে দাম বাড়েনি।
আফগানিস্তানের অর্থনীতির থেকে ভারতের অর্থনীতি অনেক বড়। তারপরেও যেভাবে তালিবান সরকার নিয়ম কানুনের অদল বদল করে এই দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে এবং ডলারের নিরিখে ভারতকে কিছুটা কোণঠাসা করে দিয়েছে, তা সত্যিই অবাক করে দেবার মতন। আপনারা কি বলেন মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ