আপাদমস্তক ভদ্রলোক তিনি। বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আবার লড়াই করে কংগ্রেসকে বাঁচিয়েও রেখেছিলেন। এমন লড়াকু নেতাই যখন হঠাৎ করে নিজের দলেই গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেন তখন আক্ষেপ তো তৈরি হবেই। এবার সেটারই সুযোগ নিচ্ছে দুটি দল- বিজেপি এবং তৃণমূল। আর এই দুটো দলই চাইছে অধীর চৌধুরিকে নিজের দিকে টানতে। কারণ বঙ্গ রাজনীতিতে অধীরের গুরুত্ব একেবারেই কম নয়। এহেন পরিস্থিতিতে অধীর চৌধুরী কোথায় যাবেন, সেই নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। আর সেই জল্পনার অভিমুখ যেদিকে, তারপর অনেকেই মনে করছেন যে অধীর চৌধুরীকে কংগ্রেস ছেড়ে যেতে হলে বিজেপি ছাড়া গতি নেই। তাহলে কী সত্যিই অধীর যাবেন বিজেপিতে? আসুন, সেই নিয়েই ছোট্ট একটা আলোচনা সেরে নেওয়া যাক।

লোকসভা ভোটে হারার পর থেকেই অধীর চৌধুরী যেন ধীরে ধীরে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছিলেন। রাজনীতিতে আপন বলে কেউ তো হয় না। কিন্তু অধীর চৌধুরী কি এতটাই অপ্রাসঙ্গিক যে তাঁকে গুরুত্ব দিতে খুব একটা রাজি হচ্ছে না কংগ্রেস শিবির? যে মানুষটা বাংলার রাজনীতির উঠোনে কংগ্রেসের মত সর্বভারতীয় দলকে প্রায় একা টেনে নিয়ে গেছিলেন, সেই অধীর চৌধুরী হেরে যেতেই কি কার্যত ছুঁড়ে ফেলে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করছে না কংগ্রেসের শীর্ষ মাথারা? লোকসভা ভোটের পর কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে কাছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন অধীর চৌধুরী। যদিও সেই ইস্তফা গ্রহণ করা হয়েছিল কিনা সেটা জানার আগেই দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকা দলীয় বৈঠকে তাঁকে প্রাক্তন বলে অভিহিত করা হয়। তারপরই ক্ষোভ এবং অপমানে ফেটে পড়েন বহরমপুরের এই প্রাক্তন সাংসদ। এরপরই আসরে নেমে পড়ে বিজেপি এবং তৃণমূল।

অধীর চৌধুরী বঙ্গ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত লড়াকু একটা মুখ। তাঁর নিজের যে সাংগঠনিক জোর ভালোরকম রয়েছে তাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। এমন অবস্থায় অধীর চৌধুরী কিভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন সেটা এখন অধীর চৌধুরীর থেকে অনেক বেশি ভেবে ফেলছে তৃণমূল, বিজেপি। অধীর চৌধুরী কি করবেন এবার সেই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। এই বিষয়ে বিজেপি নেতা শমিক ভট্টাচার্য কী বললেন সেটা শুনে নিন একবার।

এদিকে কান্দির তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকার- তিনিও অধীরকে তৃণমূলে আসার জন্য দরজা খুলে রেখেছেন। কিন্তু অধীর এতদিন পর্যন্ত যে স্ট্যান্ড পয়েন্ট ধরে রেখেছিলেন, সেই পয়েন্টে স্টিক করে থাকলে অধীরের কিন্তু তৃণমূলে আসাটা বেশ কঠিন। একইসঙ্গে সমালোচনার ঝড় যে উঠবে সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। এই লোকসভা নির্বাচন হবার আগে অধীর যেভাবে তৃণমূলকে উঠতে বসতে বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছিলেন তারপর এখন কিভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে অধীর যোগ দিতে পারেন সেখানেই? তাছাড়া খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেও অধীর চৌধুরীকে নিয়ে খুব একটা আশা দেখাচ্ছিলেন না। বরং সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলাপ আলোচনা চালানোর জন্য অধীরকে ব্রাত্য রাখার পক্ষেই ছিলেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে অধীর নিজের ব্যক্তিত্ব খুইয়ে তৃণমূলে ফিরবেন বলে মনে হয় না। আবার এদিকে অধীরের বিজেপি বিরোধী মনোভাব সকলেই জানে। আবার এটাও ঠিক যে, সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে অধীর যেমন বিজেপি বিরোধী মনোভাব দেখিয়েছেন তেমনই বাংলায় তৃণমূল বিরোধী মনোভাব দেখিয়েছেন তিনি। ফলে দুদিকেই এখন শাঁখের কড়াত। কী করবেন অধীর চৌধুরী? বিজেপিতে যাবেন নাকি তৃণমূলে যাবেন? নাকি দিন শেষে তিনি কংগ্রেসেই কিছুটা না থেকেও থেকে যাবেন সেটা বলবে সময়। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।

জীবন হোক অর্থবহ