Trending
তৃণমূলের রাজনীতি আর ভালো লাগছে না অভিষেকের? নতুন করে সংঘাত বাঁধল তৃণমূলের অন্দরে? ভোট মিটতেই কি তাই ঢাকঢোল পিটিয়ে বিরতিরবার্তা দিলেন অভিষেক? কিন্তু অভিষেকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণে কতটা সক্ষম হবে? অভিষেকের বিরতি কি তাহলে আবার নতুন-পুরনো সংঘাতকে সামনে এনে দিল না? কত প্রশ্ন চলে আসে, অভিষেকের ছোট্ট একটি বার্তায়। তাহলে কি আবারও নতুন করে প্রকাশ্যে আসবে আদি-নব্যের টানাপোড়েন?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়- এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতি যাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। দিন দিন প্রতিদিন তিনি দেশীয় রাজনীতির চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন। অখিলেশ যাদব যেমন এই লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে হারিয়ে নেতা থেকে নায়ক হয়ে উঠেছেন, তেমনই অভিষেকের ম্যাসিভ জয় কোথাও গিয়ে যেন তাঁকেও নায়ক করে তুলেছে। তাই কয়েকদিন আগে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের পর আলাদা করে অভিষেকের দিল্লির আবাসনে গিয়ে দেখা করেছেন অখিলেশ। তারপর অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে রাঘব চাড্ডার- যিনি আম আদমি পার্টির তরুণ তুর্কি। অর্থাৎ রাজ্য রাজনীতির বাইরে গিয়ে এখন দেশের রাজনীতির আঙিনায় অভিষেকের নিজস্ব একটা স্টেটাস তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই তো ঘরে-বাইরে অভিষেকের পলিটিক্যাল কেরিয়ার রয়েছে বুলিশে। সেই অভিষেক অকস্মাৎ এক্স হ্যান্ডেলে লিখলেন, আপাতত ছোট একটা বিরতি। কেন? লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি থেকে একেবারে রেজাল্ট বেরনো, তারপর ইন্ডিয়া বৈঠক- এই ঝোড়ো যাত্রাপথের কারণেই কি অভিষেক ক্লান্ত? এবার একটু রেস্ট নেবার সময়? কিন্তু অভিষেক বললেন একেবারেই না। তাহলে?
অভিষেক চিকিৎসার জন্য মাঝেমধ্যেই দেশে অথবা দেশের বাইরে গিয়ে থাকেন। তবে কোনবারই এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বসমক্ষে বিষয়টা ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে বলেন না। কিন্তু এবারে কেন প্রয়োজন পড়ল? তাছাড়া অভিষেক আরও কিছু কথা বলেছেন, যা জল্পনা আরও উসকে দিচ্ছে। তিনি বলছেন, সাধারণ মানুষের চাহিদা কী কী, সেই বিষয়টা তিনি আরও ভালো করে দেখতে চান। তিনি মনে করেন রাজ্য সরকার মানুষের সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত করবে। মানুষের ন্যায় বিচার দিনের শেষে নিশ্চিত হবেই। অর্থাৎ কোনভাবে কি রাজ্য সরকারের কাজ নিয়ে তিনি বিরক্ত? খেয়াল করলে দেখবেন, গত বছর এই সময় তিনি করেছিলেন নবজোয়ার যাত্রা। যা অনেকেই রাহুলের ভারতজোড়ো যাত্রার কপিক্যাট বলে তির্যক ইঙ্গিত করেছিলেন। রাহুলের ছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী আর অভিষেকের ছিল পাহাড় থেকে সুন্দরবন। ৫১ দিনের যাত্রা, সাড়ে ৪ হাজার কিমি তিনি হেঁটেছিলেন। করেছিলেন ১৩৫টি জনসভা, ৬০টি বিশেষ অধিবেশন, ১২৫টা রোড শো, ৩৩টা রাত্রিকালীন অধিবেশন। অবশ্যই সেটা তৃণমূলকে আলাদা অক্সিজেন জুগিয়েছিল। গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি গরিবগুরবোদের ঘরে পৌঁছে গেছিলেন। কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে গলা ফাটিয়েছিলেন। চলে গেছিলেন দিল্লি। মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে ৫৯ লক্ষ শ্রমিকের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা, সেটা দিয়েছে রাজ্য সরকার। ডিসেম্বরের মধ্যে আবাস যোজনার টাকা দেবে এই রাজ্য সরকারই। ফলে তৃণমূলের ভাগ্যচক্রে এখন শুধুই শুভযোগ। বহু তৃণমূল সমর্থকদের কাছে অভিষেক একজন হিরো হয়ে উঠেছেন এবং তাঁরা মনে করেন, বিজেপি যে অ্যান্টি-হিরো রোল প্লে করে বাংলায় সরকার গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে, সেই আশায় ছাই ঢেলে দিয়েছেন অভিষেক। তা সেই অভিষেকের হঠাৎ কী হল?
আমরা এটাও জানি যে, আদি তৃণমূল এবং নতুন তৃণমূল নিয়ে একটা ভালোরকম টানাপোড়েন নির্বাচনের আগে আগেই আমরা লক্ষ্য করেছি। স্পেশ্যালি ববি হাকিম, সৌগত রায় মনে করেছিলেন যে যারা শুরুর দিন থেকে তৃণমূল করছেন তাঁদের বাদ দিয়ে তৃণমূল অসম্পূর্ণ। এদিকে অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। তার জন্য তাঁকেও অল্পস্বল রোষের মোকাবিলা করতে হয়েছিল। নির্বাচনের আগে এই জিগির ওঠায় ঘাসফুল শিবিরে স্বাভাবিকভাবেই প্রবল অস্বস্তি তৈরি হয়। সেই সময় এক গুজব ছড়ায়, অভিষেক হয়ত এই মন কষাকষি সহ্য করতে পারবেন না। তারপর অবশ্য তৃণমূলের সকল কর্মীরা একযোগে বলতে শুরু করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে তৃণমূলের বিজয়রথ এগিয়ে যাবে। তাহলে এখন?
অভিষেক চোখ নিয়ে একটু ভোগেন। সময় সময় তাঁর চোখের চিকিৎসা চলে। তার জন্য বিদেশে পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু বুধবারের পোস্টে তিনি আলাদা করে এসব কিছু উল্লেখ করেন নি। তাই প্রশ্নটা থেকেই গেল, কেন ছোট বিরতির প্রয়োজন পড়ল অভিষেকের? অবশ্য কর্মী সমর্থকরা বলছেন, রুটিন চিকিৎসার জন্যই তাঁর এই সংক্ষিপ্ত বিরতি। আপনারা কি মনে করেন জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে করুন লাইক শেয়ার। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ