Trending
কৃষি ভবনে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। কাঁধে তাঁর চিঠির বোঝা। লক্ষ্য একটাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নিয়ে আসতে হবে মোট ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা। যা আটকে রেখেছে মোদী সরকার। আর এটাই দিল্লির যন্তর মন্তর থেকে ঘোষণা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। আর এদের সামলাতে যন্তর মন্তর থেকে কৃষি ভবন পর্যন্ত এলাকা যেন দুর্গে পরিণত করেছিলেন অমিত শাহের পুলিশ। কিন্তু দিনভর অপেক্ষাই সার হল। কারণ শুধু ধস্তাধস্তি, চ্যাংদোলা করে বাসে তোলা এবং দিনের শেষে আবারও ধর্নায় বসার হুমকি। আপাতত এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হল তৃণমূলকে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা আর দেবে না। কেন? কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতা থেকে কি বাদ পড়বেন বাংলার মানুষ? নাকি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র অনাস্থা তৈরিই রয়েছে টাকা না দেওয়ার নেপথ্যে?
বাংলার পরিস্থিতি কেমন, আমরা সকলেই দেখতে পাচ্ছি। ডিএ নিয়ে ধর্না, শিক্ষকদের ধর্না। রাজ্য সরকার একের পর এক প্রকল্প চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। প্রকল্পের টাকার জোগান দিতে গিয়ে কোষাগারে চাপ পড়ছে। কোষাগারে চাপ পড়ছে কারণ বাংলায় সেভাবে কোন শিল্প নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদ্য সমাপ্ত বিদেশ সফরের পর লুলু গ্রুপ বিনিয়োগ করবে বলেছে। সেই বিনিয়োগের পরেও ম্যাসিভ কোন চেঞ্জ মনে হয় লক্ষ্য করা যাবে না। আনএমপ্লয়মেন্ট রেট কমে আসবে না। এদিকে তাজপুরে যে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির কথা ছিল আদানির, সেই প্রকল্প এগোচ্ছে খুব ঢিমেতালে। এমন সময় দাঁড়িয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি, পুরসভায় দুর্নীতি। একের পর এক বিগ স্ক্যাম দেখছেন সাধারণ মানুষ আর সেই কারণেই হয়ত বা ধীরে ধীরে ভরসা উঠে যাচ্ছে কেন্দ্রের। অনাস্থা তৈরি হচ্ছে তৃণমূলকে ঘিরে।
এখানেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটা প্রশ্ন তুলেছেন। সত্যি বলতে কি বিজেপি প্রথম থেকেই তৃণমূলকে পাখির চোখ করেছে দুর্নীতিকে আশ্রয় দেবার জন্য। যে কারণে সিবিআই, ইডির কর্তারা হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন বাংলায়। কিন্তু ধরা পড়ছেন কোথায়? পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মন্ডলের মতন কিছু বাঘা নেতাদের গারদের পিছনে ঠেলে দেওয়া গেছে, তবে অনেকেই বলছেন বাংলার স্বপ্ন ভাঙার কারিগরদের এখনো ধরা বাকি। সিপিএম নেতা এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণ শানিয়ে গেছেন। বিচারপতি অমৃতা সিনহা, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই নিয়ে বহুদিন ধরেই একের পর এক প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে করিয়ে দিয়েছেন ইডি, সিবিআই কর্তাদের পাশাপাশি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত অনেককে। তারপরেও তো কোন দিশা দেখা যায় নি। তাহলে কি এই বিচারপ্রক্রিয়ার কোন এন্ডিং ইঙ্গিত নেই? এখন পরিস্থিতি কোথায় যাচ্ছে তাহলে?
তৃণমূল সরকারের আমলে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি। এদিকে বিজেপি ধোয়া তুলসি পাতা নয়। বেকারত্বের গ্রাফ উঠছে দেশে অথবা রাজ্যে। তবু বিজেপি সরকার যেভাবে দুর্নীতিগুলো বেশ পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে তৃণমূল পারছে না। বরং অস্বস্তির বহর বাড়ছে। বিজেপি সরকারের বক্তব্য, বাংলার তৃণমূল সরকার নাকি আপাদমস্তক দুর্নীতির পাঁকে ডুবে রয়েছে। তাই যে টাকা পাঠানো হচ্ছে বাংলায় তার আদ্দেক টাকাই হাপিশ হয়ে যাচ্ছে। নেতা মন্ত্রীদের পকেট গরম হচ্ছে, এদিকে বাংলার মানুষ বঞ্চিত থাকছেন। মুশকিল হচ্ছে, বর্তমানে রাজ্যের পরিস্থিতি পৌঁছে গিয়েছে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির জায়গায়। যদিও দু-পক্ষই এ বলে আমায় দেখ আর ও বলে আমায় দেখ। পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। তবু আশা ভরসার জায়গা থেকে এক ইঞ্চি সরে আসেন নি তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। দিল্লি থেকে হুঙ্কার দিয়েছেন, জব হোল্ডারদের আশ্বাস দিয়েছেন। ছ’মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ সুদ সমেত টাকা ফিরিয়ে আনবেন তিনি। প্রথম দফায় ২০ লক্ষ মানুষের টাকা, দ্বিতীয় দফায় আরও ২০ লক্ষ মানুষের টাকা। সঙ্গে ১০% সুদ- সেটা মূল্যবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু শুধু ধর্না, অভিযোগ এসব করে কি আদৌ কিছু হবে?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ৫ হাজার লোক নিয়ে তিনি এসেছিলেন দাবির টাকা আদায়ে। কাজ হয় নি, তাই পরের বার ১ লক্ষ মানুষ নিয়ে আসবেন তিনি। এই চ্যালেঞ্জ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই চ্যালেঞ্জ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের। আবার একইসঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ বাংলার মানুষের। বাংলার মানুষের পাশে কে রয়েছে? ওহ, আরেকটা বিষয়। কাল যে গেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ধর্না মঞ্চ থেকে আস্ফালন করলেন, তারপর কি আর নতুন কোন প্রোগ্রেস? দেশ দেখেছে কিভাবে ফিরহাদ হাকিম, উদয়ন গুহ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্রদের টেনে হিঁচড়ে বের করে আনা হয়েছে। দিনের শেষে সমস্যা থেকেই গেছে। শুধু অধরা রয়েছে সমাধান। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় টাকা নিয়ে আসার যে স্ব-ঘোষিত ডেডলাইন দিয়েছেন সেটাও ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে। তার আগের মাসেই শেষ হবে লোকসভা ভোট। তারপর? জানা নেই। আদৌ কি বাংলার মানুষ ন্যায্য বিচার পাবেন? আদৌ কি টাকা ফেরত আসবে? আদৌ কি রাজ্যে কর্মসংস্থানের জোয়ার আসবে? আদৌ কি পাহাড় দুর্নীতির চূড়া খাটো হতে শুরু করবে? কী হবে জানা নেই। তার উত্তরের জন্যই অপেক্ষা করছেন বাংলার মানুষ। আপনাদের কি মনে হয়? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ