Daily
বাংলাদেশের আব্দুল রহিমের খেজুর গুড়ে মজে উত্তরবঙ্গ
খাবার মানে না কোন দেশভাগ, ধর্ম, জাত। কারণ এক সংস্কৃতির খাবার আরেকটি সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে যায় ভালোভাবেই। দিনের শেষে খাদ্য রসিকদের তাই পোয়া বারো। আর শীতকাল পড়লে তো কথাই নেই। কারণ বাঙালি শীতকালে গুড় ছাড়া এক মুহূর্ত চলতে পারে না। তাই যারা গুড় তৈরি করে আয়ের সুলুক সন্ধানে মেতে থেকেছেন, তাঁরা জানেন, কিভাবে গুড়ের ব্যবসা গোটা পশ্চিমবাংলাকে মাতিয়ে রাখতে পারে। তাই শীতের মরশুমে যেমন বিভিন্ন জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের ঢল নামে, তেমনি গুড় তৈরি করে আয়ের সন্ধান পেতে জলপাইগুড়িতে পৌঁছে যান বাংলাদেশের আব্দুল রহিম।
বাংলাদেশের রাজশাহির বাসিন্দা আব্দুল রহিম। তিনি খেজুর গুড় তৈরি করেন প্রতি শীতকালে। কিন্তু সেটা বাংলাদেশে বসে নয়। বরং জলপাইগুড়িতে বসে। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের গজলডোবায় পেটের টানে ভিটেমাটি ছেড়ে উপস্থিত হন আব্দুল রহিম। যাকে স্পর্শ করেনা বাংলার নাগরিকত্ব আইন। যিনি বাংলার আন্দোলনের আঁচ গায়ে মাখতেও নারাজ। চোরাপথে না এসে বরং টুরিস্ট ভিসা নিয়ে বৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি। তারপর শীত শুরুর আগে কিছু টাকার বিনিময়ে এলাকার প্রায় একশো খেজুর গাছ বুক করেন। তারপর শুরু হয় লড়াই। প্রতিদিন গাছে উঠে হাঁড়ি বাঁধা, সেই হাঁড়ি নামিয়ে আনা। তারপর খেজুর গুড় তৈরির পরিশ্রম। এই বিষয়ে কি বললেন আব্দুল রহিম…
প্রতিদিন ৯০ থেকে ৯৫ টা গাছ থেকে ২৫০-৩০০ কিলো রস রংগ্রহ করেন তিনি। তারপর ব্যস্ত থাকেন খেজুর গুড় তৈরি করতে। খোলা বাজারে এই খেজুর গুড় বিক্রি হয় ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় তাঁর তৈরি খেজুর গুড়। লাভ যে খুব বেশি হয় এমন নয়। তবু পেটের টানে এবং রসের টানে ভারতে বারবার ফিরে আসেন তিনি। করোনা মহামারির কারণে আসাতে একটা ধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবারে ফিরেছেন সেই পুরনো ফর্মে। বিগত ৭ বছর ধরে তাঁর এই গুড় তৈরির ব্যবসাকে সাপোর্ট করছেন গজলডোবার দুধিয়া গ্রামের বাসিন্দারাও। তাঁরা আব্দুল রহিমের হাতে তৈরি খেজুর গুড়ের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতেও রাজি।
অরূপ পোদ্দার
জলপাইগুড়ি