Trending
পৃথিবীর শীর্ষ ধনী কারা? এই নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম নয়। কে থাকবে এগিয়ে আর কে পড়ল পিছিয়ে এই নিয়ে চলে দুর্দান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কখনো ইলন মাস্ক, কখনো বার্নার্ড আর্নল্ট, কখনো বেজোস তো কখনো আদানি, অম্বানি। পৃথিবীর এই সকল ধনী ব্যক্তিদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল উন্মাদনা থাকলেও আপনি কি জানেন, ইতিহাসের পাতায় যে সকল ধনী ব্যক্তিরা ঠাঁই নিয়েছেন, আজকের বিত্তবানদের সম্পত্তি তাঁদের ধারেকাছেও নেই। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আপনার মনে হতেই পারে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন ব্যক্তি রয়েছেন যারা আজকের বিত্তবানদের সম্পত্তির পরিমাণ শুনলে হাসবেন? আসুন, আজকের প্রতিবেদন একটু হালকা চালেই শুরু করা যাক। সঙ্গে ঝাঁপ দেওয়া যাক অতীতে।
প্রথমেই বলি, অতীতে যে সকল রাজা-রাজরাদের সম্পত্তির আনুমানিক হিসেব কষা হয়েছে, সেটা এখনকার মতন এতো সহজ নয়। সেই সময় ছিল না কোন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ছিল না কোন অত্যাধুনিক সিস্টেম। তাহলে আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এদের সম্পত্তির পরিমাণ কত, কিভাবে সেটা অনুমান করা হল? সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বা বিবিসি যে-সকল ধনী ব্যক্তিদের কথা বলেছে, তাঁরা আজ থেকে বহু আগে এই পৃথিবীতে শাসন করে গিয়েছেন। সেই সময় এদের সম্পত্তির বিচার করা হত তাঁদের ক্ষমতা, তাঁদের জায়গা দখলের সীমানা, নুন এবং সোনা, হিরের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। বর্তমানে এই সকল বিত্তবানদের যেটুকু সম্পত্তির অনুমান করা হয়েছে, সেই অনুমানের সঙ্গে যদি এখনকার মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে তা বিচার করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, সেই সম্পদের পরিমাণ বিলিয়ন ছাড়িয়ে ট্রিলিয়নে পৌঁছে যায়। মাথাটা বাঁই করে ঘুরে গেল তো? তাহলে আর দেরি না করে বরং আজকের দেখা যাক পৃথিবীর ইতিহাসে পাঁচ ধনীতম ব্যক্তির সম্পত্তির পরিমাণ কত ছিল?
১। মানসা মুসা
পৃথিবীর ইতিহাসে এই ব্যক্তিকে নিয়ে তেমন একটা চর্চা হয় না ঠিকই, কিন্তু মানসা মুসা নিজের রাজত্বকালে একটি দেশের অর্থনীতির ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন। মানসা শব্দের অর্থ সুলতান। তিনি ছিলেন পশ্চিম আফ্রিকার এক মুসলিম শাসক। ১৩০৭ সালে তিনি রাজসিংহাসনে বসেন। তারপর ২৫ বছর রাজত্ব করেছেন একটানা। মুসার সময়েই মালি পৃথিবীর সবথেকে বড় সোনা উৎপাদক হয়ে ওঠে। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কত, সেই বিষয়ে আজ পর্যন্ত নাকি কেউ ধারণা পর্যন্ত করতে পারেনি। অনেকেই বলেন, মুসার কাছে এতো পরিমাণ সোনা ছিল, যে তিনি ১০ কিমি রাস্তা সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে পারতেন। তবে মুসা সবথেকে বেশি বিখ্যাত তাঁর বিখ্যাত হজ পালনের কারণে। প্রচলিত আছে, হজ পালনের জন্য সেই সময় মুসার সঙ্গে ছিল ৬০ হাজার লোক, ৫০০ ভৃত্য, যাদের হাতে ছিল একটা করে সোনার লাঠি, আর ছিল ১০০টি মত উট। প্রত্যেক উটের সঙ্গে ছিল বস্তা। আর প্রতিটি বস্তায় ছিল ১৪০ কেজি করে সোনার গুঁড়ো। তিনি হজ পালনের জন্য মিশরের কায়রোতে বেশ কিছুদিন বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি এতো পরিমাণ সোনা বিলিয়েছিলেন, যে মিশরে সোনার দাম পরবর্তী ১০ বছর একেবারে তলানিতে এসে নামে।
২। চেঙ্গিজ খান
নির্ভীক, নাকি দয়ামায়াহীন? চেঙ্গিজ খানের সঙ্গে কোন বিশেষণ অ্যাপ্রোপিয়েট হবে? ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত শাসক একদিক থেকে যেমন একের পর এক দেশ, ভূমি নিজের দখলে অধিকার করে গিয়েছেন, তেমনই বাড়িয়ে গিয়েছেন তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিজ খান পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম চর্চিত এক শাসক। জন্মের সময় যার নাম ছিল তেমুজিন। ১২০৬ থেকে ১২২৭- এই সময়ের মধ্যে মঙ্গোল গোষ্ঠীদের এক ছাতার তলায় এনে চেঙ্গিজ খান বিশ্বজয়ের একেকটা আখ্যান রচনা করে গিয়েছেন। এশিয়া এবং ইউরেশিয়া মিলিয়ে মোট ১৫০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার নিজের দখলে করেছিলেন সম্রাট চেঙ্গিজ। বলা হয়, তাঁর সম্পত্তির মোট পরিমাণ ছিল ১২০ ট্রিলিয়ন ডলার। তাঁর কোষাগারে ছিল দুই লক্ষ টনের বেশি সোনা। সঙ্গে ছিল এতো পরিমাণ হিরে, যার বর্তমান বাজার মূল্য হতে পারে ১ লক্ষ কোটি ডলার। আর তিনি যে পরিমাণ জমির মালিক ছিলেন, সেই অঙ্কটা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পৌঁছে যাবে ৯০ লক্ষ কোটি ডলারে। শাসক চেঙ্গিজের যা সম্পত্তি ছিল, হিসেব কষলে দেখা যাবে, তার পরিমাণ বিশ্বের সকল ধনকুবেরদের থেকেও তিনগুণ বেশি।
৩। সম্রাট শেনজং
চিনের জং রাজবংশের ষষ্ঠ শাসক। একে নিয়েও ইতিহাসের পাতায় তেমন একটা চর্চা করা হয় না। কিন্তু এই শাসক নিজের ক্ষমতায় অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। মাত্র ৩৭ বছরের জীবনকালে তিনি যে প্রভূত সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন, তার আনুমানিক পরিমাণ প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার। বলা হয়, সেই সময় বৈশ্বিক জিডিপির ৩০ শতাংশের সমপরিমাণ সম্পত্তি ছিল সম্রাট শেনজং-এর কাছে। তিনি রাজত্ব করেছিলেন ১০৪৮ থেকে ১০৮৫ সাল পর্যন্ত। জানা যাচ্ছে, তিনি এই অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন সুদক্ষ কর আদায় ব্যবস্থার জন্য।
৪। আকবর
জালালউদ্দিন মুহম্মদ আকবর। মোগল সাম্রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করে থাকেন, শুধু মোগল সাম্রাজ্যের নন। তিনি ছিলেন ভারতের তথা বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা শাসক। তাঁর আমলে মোগল সাম্রাজ্য বিষয়ে আশয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছিল। বাবা হুমায়ূনের মৃত্যুর পর মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি রাজ্যভার গ্রহণ করেন। তিনি মোগল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেছিলেন ১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ সাল পর্যন্ত। আর এই সময়েই তিনি অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। অনেকেই বলেন, তাঁর কাছে এতো পরিমাণ সম্পত্তি ছিল যা সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্ব জিডিপির ২৫ শতাংশ। আর এই বিপুল সম্পত্তি তিনি তৈরি করতে পেরেছিলেন, তাঁর সুদক্ষ এবং সুপরিচালিত রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য। যাকে সেই সময় বিশ্বের অন্যান্য শাসকরা কুর্নিশ করেছিলেন। ২০১৫ সালে ‘মানি’ ম্যাগাজিন আকবরকে সর্বকালের বিশ্ব ধনীদের তালিকায় তিন নম্বরে ঠাঁই দিয়েছিল। মনে করা হয়, আকবরের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২১ ট্রিলিয়ন ডলার।
৫। সম্রাজ্ঞী ঊ
চিনের সুবিশাল রাজইতিহাসের একমাত্র নারী শাসক। যার হাত ধরে বদলে গেছিল চিনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্র। ৬৩৮ থেকে ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সম্রাজ্ঞী উ চিনের সার্বিক উন্নতি তুলে ধরেন। তিনি এমনই একজন নারী ছিলেন যিনি পুরুষতান্ত্রিক চিনের সকল নিয়মকানুনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গোটা চিনকে নিজের দখলে নিয়ে আসেন। তাঁর বাবা উ শিহু ছিলেন চিনের ট্যাং রাজবংশের প্রাদেশিক গভর্নর এবং বড় ব্যবসায়ী। শৈশব থেকেই নাকি সম্রাজ্ঞী উ রাজনীতি, অর্থনীতির মত নানা বিষয়ে পড়াশুনো করেছিলেন। মুক্তমনা পরিবারে বড় হওয়ার কারণে সম্রাজ্ঞী উ নিজেকে দক্ষ শাসক হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন। বলা হয়, সম্রাজ্ঞী ঊ ছিলেন যতটা কোমল মনোভাবের, ঠিক ততটাই নির্দয়। তাঁর নির্মম শাসননীতির কারণে চিনের ইতিহাসে তিনি আজও বিখ্যাত হয়ে আছেন। বলা হয়, সিল্ক রুটে তিনি চা এবং সিল্কের ব্যবসা করেই বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হন। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
ইতিহাসের পাতা নাড়াঘাঁটা করলে এমন আরও কত তথ্যই না বেরিয়ে আসে, যার অনেকটাই আমাদের কাছে অজানা। আজকের যে পাঁচ ব্যক্তির কথা বললাম, বুঝতেই পারছেন, তাঁরা সম্পদের বিচারে কিভাবে বলে বলে পিছনে ফেলে দেবেন, বর্তমান সময়ের বিত্তশালিদের।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ