Trending
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তন্নতন্ন করে খনিজের সন্ধান চালাচ্ছে চন্দ্রযান-৩। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, দক্ষিণ মেরু থেকে চন্দ্রযান-৩ যা কিছু খুঁজে বের করবে তার কোনটাই শুধু ভারতের জন্য হবে না। বসুধৈব কুটুম্বকম- পুরো বিশ্ব একটাই পরিবার। সুতরাং গবেষণার গতি যেভাবে এগোবে, সেটা পুরো বিশ্বের জন্য খুলে দেবে ইসরো। মোদী তখন দক্ষিণ আফ্রিকায়, ব্রিকস সম্মেলনে। সেখান থেকেই চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য তুলে ধরেছিলেন তিনি। রাশিয়ার লুনা-২৫ অবতরণের আগে ক্র্যাশ করে যাওয়ায় গোটা বিশ্বের কাছে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ যেন ইসরোর কাছে অত্যন্ত প্রেস্টিজিয়াস একটা প্রোজেক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারপর সাফল্য আসতেই শেয়ার বাজারে দেখতে পাওয়া গেল নাটকীয় পরিবর্তন। এই পুরোটাই ব্যাখ্যা করব আজকের প্রতিবেদনে।
প্রথমেই বলি, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি সাপেক্ষ। বিজনেস প্রাইম নিউজ কোনভাবেই চ্যানেলের কথা শুনে আপনাদের বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে না। সেটা বাজারের ধরন দেখে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনেই আপনাদের করতে হবে। আমরা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরব কিছু ফ্যাক্টস। চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের সঙ্গে ইসরো এবং শেয়ার বাজারে যে একটা হইচই পড়ে গিয়েছে সেটাকেই তুলে ধরতে চলেছি আমরা। আচ্ছা এখানেই বলি যে, চাঁদে যদি এমনিই অবতরণ হত মানে যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং চিন পৌঁছে গিয়েছে, তাহলে হয়ত এটা ইসরোর জন্য অ্যাম্বিশাস প্রোজেক্ট হলেও বিশ্ব বাজারে স্পেশ্যালি স্পেস ইন্ডাস্ট্রির জন্য হ্যাভক কোন চেঞ্জ হয়ত হত না। কিন্তু চাঁদের অন্ধকার অদেখা দিকে ভারতের জয়ধ্বজা স্পেস ইন্ডাস্ট্রিকে অনেকটা বুম করতে সাহায্য করল। স্বাভাবিকভাবেই বড়সড় কোন হলিউড বাজেটের থেকে ভারতের এই মিশনের খরচ ছিল কম- সেটা যদি আপনি ইন্টারস্টেলার দেখেন তাহলেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন। কম খরচে সাফল্য আসতে পারে, সেটা ভারত করে দেখিয়েছে। আর যে কারণে চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে যে যে ভারতীয় সংস্থা যুক্ত ছিল তারা শেয়ার বাজারে ভালোরকম বুম করেছে।
১। পরশ ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজিস (Paras Defence & Space Technologies)
ভারতে স্পেস অপটিক্সের বাজারে এই সংস্থাটি রয়েছে সামনের সারিতে। ২০১৮ সালে ইসরো তাদের বিশাল অঙ্কের বরাত দেয়। খেয়াল রাখবেন, এই সংস্থার লভ্যাংশের ৫১% এসেছে কিন্তু স্পেস অপটিক্স এবং ডিফেন্স থেকেই। বেসিক্যালি টেকনোলজিতে কন্টিনিউয়াস প্রসেসে ইমপ্রুভমেন্ট এবং আরঅ্যান্ডডি-র কাজ করে থাকে এই সংস্থা। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের কারণে এই সংস্থা ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের ভালোরকম রিটার্ন দেবে। যদিও এক বছরে সংস্থা রিটার্ন দিয়েছে ৩.২ শতাংশ মতন। পরশ ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজিস ইজরায়েল, ইউএই এবং সিঙ্গাপুরে যন্ত্রাংশ সাপ্লাই করার কাজটি করে।
২। এইচএএল (HAL)
হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড বা হ্যাল। সরকার অধীনস্থ এই সংস্থাটি প্লেন, হেলিকপ্টার, ইঞ্জিন সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে থাকে। এতে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে হ্যাল। শুধুমাত্র ইসরোর জন্য ২০৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সংস্থাটি একটি কারখানা নির্মাণ করেছে। এখানে তৈরি করা হয় ইন্টিগ্রেটেড ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন। খেয়াল করবেন সংস্থাটি জানিয়েছিল যে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই হ্যাল প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছিল। যদিও এই সংস্থার মূল লাভ এসেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে। এক বছরে এই সংস্থাটি রিটার্ন দিয়েছে ৭৬ শতাংশ।
৩। এমটিএআর টেকনোলজিস লিমিটেড (MTAR Technologies Limited)
ইসরোর মহাকাশ মিশনে যে ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় সেটা তৈরি করা হয় তেলেঙ্গানার কারখানায়। তৈরি করে এমটিএআর টেকনোলজিস লিমিটেড। সংস্থাটি মূলত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য তৈরি করে ফুয়েলিং মেশিন হেড, গ্রিড প্লেট। এছাড়া ইসরোর জন্য তৈরি করে লিকুইড প্রপালশন রকেট ইঞ্জিন, ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন। এমটিএআর টেকনোলজিস লিমিটেড দারুণভাবে যুক্ত রয়েছে রাফায়েল, টাটার মতো কোম্পানির সঙ্গে। এই সংস্থাটিও বিনিয়োগকারীদের নিরাশ করেনি। এক বছরে রিটার্ন দিয়েছে ৫৫ শতাংশ।
৪। ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (Bharat Heavy Electricals Limited)
ভেল বা ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড। দেশের বৃহত্তম ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এতোদিন ধরে ইসরো লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি নিয়ে আসত দেশের বাইরে থেকে এবং অ্যাসেম্বল করত ভারতে। এখন ভেল হাত মিলিয়েছে। সুতরাং লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি আর বাইরে থেকে আনানোর প্রয়োজন পড়বে না। এবার মনে হতে পারে এটা তো লং টার্ম প্রোজেক্ট। চন্দ্রযান-৩ এর জন্য কী করেছে ভেল? তৈরি করেছে ইলেকট্রিক প্রপালশন মডিউল এবং টাইটানিয়ামের ফুয়েল ট্যাঙ্ক। বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন দিয়েছে কত জানেন? ৯২ শতাংশ।
৫। লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (L&T)
আমরা সকলেই জানি এই সংস্থার নাম। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই সংস্থাটির নাম জড়িয়ে রয়েছে ইসরোর সঙ্গে। সর্বোপরি চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে। কারণ সংস্থাটি চন্দ্রযান-৩ এর জন্য তৈরি করেছে ক্রিটিক্যাল বুস্টার সেগমেন্ট। ফলে এই কোম্পানি যে বিনিয়োগকারীদের ভালোরকম রিটার্ন দেবে তাতে আর আশ্চর্য কী? সংস্থাটি এক বছরে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন দিয়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ।
এই প্রতিবেদন তুলে ধরার উদ্দ্যেশ্য একটাই। ইসরোর সাফল্য শুধু ইসরোর সাফল্য নয়। সেটা গোটা ভারতের সাফল্য। ইকোনমিক অ্যাঙ্গেল থেকে দেখলে তো বটেই। আপনাদের জানিয়ে রাখি, ২০২০ সালে ভারতের স্পেস ইকোনমির ভ্যালুয়েশন ছিল ৯.৬ বিলিয়ন ডলার মতন। তবে ব্রিটিশ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আরনেস্ট অ্যান্ড ইয়ং বলছে ২০২৫ সালের মধ্যে সেই ভ্যালু পৌঁছে যাবে ১৩ বিলিয়ন ডলারে। এই মেজর জাম্প কেন? দুর্দান্ত বিনিয়োগের কারণেই তো। খেয়াল রাখবেন, বিজনেস প্রাইম নিউজ কোনভাবেই আপনাদের এই সংস্থাগুলির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে না। চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যে ইসরোর সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার দর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে নতুন করে উৎসাহ তৈরি করছে শুধু সেই সকল সংস্থাগুলির এক বছরের রিটার্নের কথাই আমরা তুলে ধরলাম। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বিনিয়োগ যদি আপনাকে করতেই হয় তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে করুন। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই কিন্তু আপনার বিনিয়োগের জন্য দায়ী থাকবে না। সঙ্গে প্রতিবেদনটি লাইক করুন শেয়ার করুন। আর হ্যাঁ, চ্যানেলে নতুন হলে ছোট্ট একটা কাজ- প্লিজ সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না যেন। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ