Trending
ইউপি মানে উত্তরপ্রদেশ। ভারতের সবথেকে বড় রাজ্য, সবথেকে পপুলেটেড রাজ্য। অনেকেই ইউপি-র কথা শুনলে মির্জাপুর সিরিজের কথা ভাবেন। মার, দাঙ্গা বা বন্দুকবাজের রাজত্ব মনে করেন। কিন্তু অবাক হবেন আপনিও এটা শুনে যে ইউপি-র ছবিটা বাস্তবের থেকে অনেকটাই আলাদা। এত বড় রাজ্য হবার কারণে ভারতের ইকোনমি স্ট্রং করতে পারবে ইউপি। অনেকেই মনে করেন, ইউপি-র মধ্যে সেই পোটেনশিয়াল রয়েছে। এখন যে ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমির স্বপ্ন দেখছে, তার মধ্যে একা ইউপি ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি তৈরি করার ক্ষমতা রাখতে পারে। হ্যাঁ, সেটার জন্য অনেক কাজ করতে হবে এই রাজ্যকে। কিন্তু একটা রাজ্য থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি কন্ট্রিবিউশন?
ইউপি খুব বড় একটা রাজ্য। রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরাখন্ড, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ সহ নেপালের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে রেখেছে। ২০ কোটি-র বেশি মানুষ বসবাস করেন এখানেই। ইউপি-তে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ইয়ং পিপল। যাদের ঠিকঠাক ট্রেনিং দিতে পারলে এই রাজ্য ভালোরকম লেবার ফোর্স তৈরি করতে পারবে। ইউপি-তে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ন্যাশনাল হাইওয়ে। রয়েছে ৯টি এয়ারপোর্ট। এছাড়া রেলপথ, জলপথে ইউপি-কে টেক্কা দেওয়া বেশ কঠিন। মানে, এক্সপোর্ট হাব হবার জন্য ইউপি হতে পারে দারুণ একটা স্টেট। বর্তমানে ইউপি-র জিডিপি-তে কন্ট্রিবিউশন ২৭০ বিলিয়ন ডলার মতন, দেশের ওভারঅল জিডিপি-র ৮% মতন। কিন্তু ইউপি-র মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি তৈরি করতে চাইছেন। তার জন্য ব্লু প্রিন্ট রেডি করে ফেলেছেন যোগী আদিত্যনাথ। কারণ এত বড় রাজ্য থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি তৈরি করা মুখের কথা নয়। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ-কে হাতিয়ার করতে চাইছে ইউপি। ইউপি-র যে ইকোনমিক কন্ট্রিবিউশন রয়েছে তার ৬০% আসে এমএসএমই সেক্টর থেকে। সুতরাং এক্সপোর্টের জায়গাটা যদি আরও মসৃণ হয়, তাহলে ইউপি-র ইকোনমি বুম করতে পারে দারুণভাবে। আর যদি এগ্রিকালচারাল সেক্টরের কথা ধরা হয়, তাহলে বলতে হবে, দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি সব্জি, আনাজের ফলন হয় ইউপি-তেই। এছাড়া আম, আলু এবং আখের ফলনেও ইউপি পিছনে ফেলে দিয়েছে দেশের অন্যান্য রাজ্যকে। সবথেকে বেশি মিল্ক প্রোডিউস হয় এই ইউপি থেকে। দাঁড়ান, দাঁড়ান- এখানেই শেষ নয়। ইউপি-তে সবথেকে বেশি পাওয়া যায় ইউরেনিয়াম, মার্বেল, বক্সাইট, গ্লাসল্যান্ডের মত ন্যাচারাল রিসোর্স। এছাড়া হাইড্রোপাওয়ার জেনারেট করার দিক থেকে ইউপি রয়েছে দেশের মধ্যে সেকেন্ড পজিশনে। আর থার্মাল পাওয়ার তৈরিতে ইউপি রয়েছে থার্ড পজিশনে। সুতরাং ছোট, বড়, মাঝারি সবধরণের ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইউপি হতে পারে দারুণ একটা রাজ্য। ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর ইউপি-কেই পাখির চোখ করতে পারে। বর্তমানে ৭২টা ইউনিভার্সিটি আর ৪ হাজারের বেশি কলেজ রয়েছে। মানে, ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হলে এখানে দক্ষ কর্মীর অভাব হবে না। ইউপি-তে এমন কোন জেলা নেই, যেখান থেকে কোন না কোন পণ্য ম্যানুফ্যাকচার হয় এবং সেটা দেশে-বিদেশে রফতানি হয়ে যায়।
লেদার ইন্ডাস্ট্রিতেও ইউপি পিছিয়ে নেই। দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেদার মেটিরিয়াল প্রোডিউস করে ইউপি। আইটি সেক্টরেও ইউপি ভালোরকম নজির তৈরি করছে। তার মধ্যে লখনউ এবং গুরগাঁও-এর কথা না-বললেই নয়। ইউপি-তে রয়েছে ৪০-এর বেশি আইটি পার্ক। সফটওয়ার এক্সপোর্ট করাতেও ইউপি-র কন্ট্রিবিউশন রয়েছে ভালোরকম। অটোমোবাইল সেক্টরও ইউপি-তে ভালোরকম বুম করছে। মিডিয়া সেক্টর পিছিয়ে নেই এই রাজ্যে। আর এই রাজ্যে ইকোনমিক কন্ট্রিনিউবশন ট্যুরিজম ছাড়া আর কিই বা হতে পারে। একটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতি বছর ইউপিতে ফরেন ট্যুরিস্ট আসে ৩৫ কোটি মত। আর দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে টুরিস্ট আসে ২৫ কোটি মতন। এখন রাম মন্দির সেই ট্যুরিজম সেক্টরকে আরও বেশি বুম করতে পারে। সুতরাং, ইউপি যে দেশের মধ্যে দুর্দান্ত একটা ইকোনমিক কন্ট্রিবিউশন করতে পারে সেটা না-বললেই নয়। কিন্তু তাও বিষয়টা এত সহজ নয়। কারণ ইউপিকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের রাজ্য তৈরি করতে গেলে যোগী আদিত্যনাথকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হবে। ইউপি-তে প্রচুর জমি রয়েছে যেখানে স্বচ্ছন্দে ইন্ডাস্ট্রি আসতে পারে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রি আসার জন্য এখানে প্রচুর পেপার ওয়ার্কের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও রয়েছে ঘুষ দেবার মত বাজে একটা ট্র্যাডিশন। এছাড়াও এই রাজ্যের কাস্ট বেসড পলিটিক্স ইউপি-তে ইন্ডাস্ট্রি আসার জন্য বেশ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রয়েছে ইলেক্ট্রিসিটির প্রবলেম। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইলেক্ট্রিসিটি প্রোডিউস করলেও এখানে বিদ্যুতের প্রবলেম মেটেনি। এছাড়া রয়েছে টেকনোলজির কিছু সমস্যা। অনেকেই মনে করেন, ইউপি-র যে এমএসএমই সেক্টর রয়েছে, সেই সেক্টরে ইউপি দারুণভাবে এগোতে চাইলেও আধুনিক টেকনোলজিকে সবাই অ্যাডপ্ট করতে পারেনি। ফলে ফাইনাল মেটেরিয়ালের দাম কখনো বাজারের থেকে বেশি হচ্ছে, কখনো বা উন্নতমানের পণ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে এত কিছুর পরেও কেন্দ্রীয় সরকার ইউপি নিয়ে আশাবাদী। আশা দেখিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ব্যবসা, ইন্ডাস্ট্রির জন্য নিয়ে এসেছেন সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম। এক ছাতার তলায় সবকিছু হবে। কমে যাবে পেপার ওয়ার্কস। ব্যবসায়ীদের লোন দেবার জন্য ইউপি সরকার নিজেও অনেক কিছু করছে। নিজের রাজ্যের পুরো সিস্টেমকে ডিজিটালাইজড করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি ইউপি-তে তৈরি খেলনার ইন্ডাস্ট্রিও বেশ পপুলার হচ্ছে। এখানে মূলত কাঠের তৈরি খেলনা বেশি পাওয়া যায়। খেলনায় রং করার জন্য ব্যবহার করা হয় সেটা তৈরি হয় ভেজিটেবল থেকে। যেটা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। মনে করা হচ্ছে, ইউপি যদি খেলনা ইন্ডাস্ট্রিতে কামড় বসাতে পারে তাহলে চিনের থেকে খেলনা ইমপোর্ট করা অনেকটাই কমিয়ে দেবে ভারত।
সবদিক থেকে রাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য ইউপি সরকার নিয়ে আসছে ওডিওপি বা ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান প্রোডাক্ট। এটা ইউপি-র ইকোনমিকে বুম করবে বলেই মনে করছেন অনেকে। যোগী আদিত্যনাথ ইউপি-র সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন, দক্ষ শ্রমিক এবং কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করার জন্য হাত মিলিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা ডেলয়েট ইন্ডিয়ার সঙ্গে। মনে করা হচ্ছে, এই সব চ্যালেঞ্জগুলোকে অ্যাকসেপ্ট করে ইউপি যদি নিজের ইকোনমিক কন্ট্রিবিউশন আরও বাড়াতে পারে তাহলে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি তৈরি করা ইউপি-র জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং হবে না। আপনিও কি ইউপি-র ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি নিয়ে আশাবাদী? জানান কমেন্ট বক্সে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ