বেসরকারিকরণের পথে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো? পর্যাপ্ত কর্মী নাকি যোগ্য নেত্রিত্বের অভাব- ঠিক কী কারণে শুরু হয়েছে এমন জল্পনা। বেসরকারিকরণ হলে সাধারণ মানুষের লাভ কোথায়? খতিতাই বা কী? কী বলছে ভারতীয় রেল? জানব বিস্তারিত।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। কোলকাতা মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মেট্রোরুট। যা কিনা কানেক্ট করে হাওড়া-শিয়ালদার মতো গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন। এবার সেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ঘিরে শুরু হল তুমুল জল্পনা। এবার নাকি বেসরকারিকরণের পথে কোলকাতা ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো। ঠিক কি কারণে এই জল্পনা?

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রুটকে বেসরকারি করতে চায় ভারতীয় রেল। এমন জল্পনা চলছিল বহুদিন থেকেই। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বুধবার রেল বোর্ডের অপারেশন এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের আধিকারিকরা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্ল্যানেড-হাওড়া অংশটি পরিদর্শন করতে আসার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেই পরিদর্শন প্রক্রিয়া জারি থাকতে পারে, এমনটাই নাকি কথা ছিল। আর রেল বোর্ডের এই কর্মকর্তাদের পরিদর্শন ঘিরেই ফের শুরু হল জল্পনা। এখন আশঙ্কা একটাই। তাহলে কী সত্যি বেসরকারি হাতেই তুলে দেওয়া হবে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোকে?

বলব। তবে আগে জেনে নেওয়া যাক যে যদি সেই আশঙ্কা সত্যি হয়, তাহলে আমাদের মানে সাধারণ মানুষের কী কী লাভ হবে? দেশের বাণিজ্যনগরী মুম্বইতে এমন একটি রুট রয়েছে, যা পুরোপুরিভাবে বেসরকারি। ঘাটকোপার থেকে বারসোভা পর্যন্ত। যার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে রিলায়েন্স মেট্রোর হাতে। তাহলে এখন কী সেই মুম্বইয়ের ধাঁচেই কোলকাতাতেও প্রাভেটাইজড মেট্রো চলাচলের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রেল কর্তৃপক্ষ?

রেলের অধীনে আলাদা জোন হলেও রেলবোর্ড চায় যে কোলকাতা মেট্রো দিল্লি মেট্রোর মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ সংস্থা হয়ে উঠুক। মানে দিল্লি মেট্রোর মতই তাদের নিজস্ব কিছু পরিষেবা বিক্রি করে যেভাবে আয়ের রাস্তা চওড়া করেছে কোলকাতা মেট্রো, সেভাবেই চলুক কোলকাতা মেট্রোর ইকোনমিক গ্রাফ। এদিকে কোলকাতা মেট্রোর কর্মকর্তারা কোনরকম দক্ষতা অর্জনের পথে না হেঁটেই ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর ভার দিল্লি মেট্রো কর্পোরেশনের হাতে তুলে দিতে চাইছে। আর এখানেই আন্দোলনের পথে হাঁটছে মেট্রো কর্মী ইউনিয়ন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন হঠাৎ দিলি মেট্রোর সঙ্গে তুলনায় আসল কোলকাতা মেট্রোর প্রসঙ্গ?

গত ৮ এপ্রিল এক সাপ্তাহিক বৈঠক হয়। আর সেখানেই একতরফাভাবে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোকে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনটাই অভিযোগ করে মেট্রো রেলের কর্মী সংগঠন। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে মেট্রো কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। একসময় কোলকাতা মেট্রোর নির্মাণের দায়িত্ব সামলেছিলেন ই শ্রীধরন। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৯৫ সালে তৈরি হয় দিল্লি মেট্রো কর্পোরেশন। আর আজ কোলকাতা মেট্রো আর দিল্লি মেট্রোর মধ্যে তুলনা করলে বোঝা যায় কে কতটা এগিয়ে।

দেশের সবচেয়ে প্রথম মেট্রো পরিষেবা শুরু হয় এই কোলকাতার বুকেই। আর সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দিল্লি মেট্রো এখন কতটা আপগ্রেডেড হয়ে গিয়েছে। নিজেদের আর্থিক অবস্থা সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অনেক বেশি অত্যাধুনিক পরিষেবা দিতে তারা প্রস্তুত। তাহলে এখন সমাধান কী? দিল্লির মতই কোলকাতা মেট্রোর বেসরকারিকরণ? মেট্রো রেলের প্রাক্তন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এতে আসল গাফিলতি রয়েছে মেট্রো বোর্ড এবং কর্মকর্তাদের।

তাদের অভিযোগ, কোলকাতা মেট্রোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দিল্লি মেট্রো আজ এতটা এগিয়ে গিয়েছে। আর ইতিহাসের হিসেবে বিচার করলে দেখা যাবে কোলকাতা মেট্রো এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। অনিয়মিত নিয়োগ এবং বড়োকর্তাদের একাংশের মধ্যে উদ্যমী মনভাব কম থাকার জন্যই আজ কোলকাতা মেট্রোকে বেসরকারিকরণের কথা ভাবতে হচ্ছে। অন্যদিকে কোলকাতা মেট্রোর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির দিকটাও কিন্তু বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।

নিজেদের প্রযুক্তি এবং পরিষেবাকে বিক্রি করে যেভাবে বিপুল আয়ের মুখ দেখছে দিল্লি মেট্রো, সেখানে চার দশক পেরিয়ে গেলেও কোলকাতা মেট্রো সেইদিক থেকে পিছিয়েই রয়েছে। সেটা কেন? প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও বিভিন্ন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেই আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনার একটা দিশা খুঁজে পেয়েছে কোলকাতা মেট্রো। এখানেই উঠছে আরও একটা প্রশ্ন। তাহলে বেসরকারিকরণ হলে কী সেই আর্থিক ক্ষতির অঙ্কটা কমবে?

দেখুন, শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়। মেট্রো স্টেশনগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকটাও কিন্তু দেখা উচিৎ। খুব বেশিদিন হয়নি ইস্ট ওয়েস্ট রুটে মেট্রো চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে চেয়ারে মরচে পড়া, বা অপরিচ্ছন্ন মেট্রো চত্ত্বর কিন্তু চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে রক্ষনাবেক্ষনে যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। হ্যাঁ! হয়তো বেসরকারিকরণ হলে একটি স্টেশনের দায়িত্বে যেহেতু একটি সংস্থা থাকবে, সেক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ ভালো হতে পারে। হয়তো যোগ্য এবং নিয়মিত কর্মী নিয়োগও হতে পারে। কিন্তু মেট্রোর ভাড়া বৃদ্ধি? সাধারণ মান্সুহের পকেটে চাপ বাড়িয়ে মেট্রো যে ভাড়া বৃদ্ধি করবে না- সেটা স্পষ্টভাবে বলা যায় কী?

অন্যদিকে, এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর হাত ধরে কোলকাতায় মতেরি যাত্রীর সংখ্যা ২৫ লক্ষের বেশি হতে পারে ২০২৮ সাল নাগাদ। আর এই আবহে কোলকাতা মেট্রোর বেসরকারিকরণ বা সেটিকে দিল্লি মেট্রো কর্পোরেশনের হাতে তুলে দেওয়ার বিরধিতায় সরব কোলকাতা মেট্রোরেল কর্মীদের একাংশ। তাই সেই বেসরকারিকরণ আটকানোর জন্য নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবেন বলেও জানিয়েছেন কর্মীদের অনেকেই।

আপনার কী মনে হয়। নিজেদের আর্থিক ক্ষতি কমাতে মেট্রো রেলের বেসরকারিকরণ কি সত্যি প্রয়োজন? নাকি সাধারণ মানুষের আয়ব্যয়ের কথা ভেবে ভারতীয় রেলের এই দিকতা আরও সময় নিয়ে নজর দেওয়া উচিৎ? জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।